বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯, ০৫:২২ অপরাহ্ন
সোমবার, ২৫ নভেম্বর : সরকারের বহুমুখী উদ্যোগের পরও পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন। কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির পাগলা ঘোড়া। গত কয়েক দিনে কিছুটা কমে শনিবার থেকে পাইকারি বাজারে দাম বাড়তে থাকে। আর রোববার খুচরা বাজারেও পেঁয়াজের দাম বেড়েছে।
খুচরা বাজারে দেশি ২২০-২৩০ টাকা এবং মিসর ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। কেজি প্রতি গড় বৃদ্ধি ৩০-৪০ টাকা। শনিবার ঢাকার পাইকারি বাজারে সকাল থেকে বিকালের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা।
শনিবার থেকে রোববার এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা। রোববার সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় খুচরায় প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
গত ২ মাস ধরে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সংকটের অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা ঢাকার বাইরে এর দাম কেজিতে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত উঠিয়েছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ২৬০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তদারকির ফলে এর দাম কিছুটা কমলেও এখন আবার বাড়তে শুরু করেছে।
পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ইতিমধ্যে বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। পাকিস্তান থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করেছে। মিসর, তুরস্ক, মায়ানমার থেকেও আমদানি করা হয়েছে পণ্যটি। এছাড়া মাঠ প্রশাসনসহ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি বিপণন অধিদফতর, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বাজার তদারকিতে নেমেছে। তারপরও দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
রোববার এফবিসিসিআইর গোলটেবিল বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, পেঁয়াজের দাম সাধারণ ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আসতে আরও ১০ দিন লাগবে। এর কারণ ব্যাখ্যায় বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, জাহাজে আমদানি করা পেঁয়াজ আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজারে আসবে।
চট্টগ্রাম পর্যন্ত আমদানি খরচ কেজিপ্রতি ৩২ টাকা পড়বে। কিন্তু খুচরা বাজারে এটি সর্বোচ্চ ৬০ টাকায় বিক্রি হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের প্রথমেই বাজারে দেশি নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। সবমিলিয়ে আগামী ১০ দিনের মধ্যেই বাজার স্বাভাবিক হবে।
এদিকে বাজারে দ্রুত সরবরাহ বাড়াতে আকাশ পথে যেমন পেঁয়াজ আসছে, তেমনি আসছে সমুদ্রপথেও। বুধবার পাকিস্তান থেকে ৮১ টন ৫০০ কেজির প্রথম চালান দেশে পৌঁছেছে। এরপর পর্যায়ক্রমে মিসর ও তুরস্ক থেকে এস আলম গ্রুপের আরও ১৬০ টন পেঁয়াজ দেশে আনে।
মেঘনা গ্রুপের ১১ টন ৪৫৩ কেজি পেঁয়াজ দেশে আসে। সব মিলে বিমানে করে এ পর্যন্ত ২৫২ টন ৯৫৩ কেজি পেঁয়াজ এসেছে। এছাড়া পাইলাইনে আরও আছে। মায়ানমার থেকেও আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েও আমদানি হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, দেশে এক মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার টন পেঁয়াজ এসেছে। এসব পেঁয়াজ মিসর, চীন ও মিয়ানমার থেকে আনা হয়েছে। পাইপলাইনে আছে আরও ৬৫ হাজার ৯৩০ টন পেঁয়াজ।
রোববার, ক্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাজার অস্থির হওয়ার দায়ভার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের। সঠিক সময় আমদানির উদ্যোগ না নেয়ায় তারা বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে পেঁয়াজ সংকট এ পর্যায়ে চলে আসছে। সরবরাহ ঠিক রাখতে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান তাদের কাছে ছিল না। এছাড়া পেঁয়াজ নিয়ে দেশে সমস্যা তৈরি হলেও তা সমাধানে যথাসময়ে উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
রোববার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার ও রামপুরা কাঁচাবাজারে খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২২০-২৩০ টাকা। যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা।
এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মিসর ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা। যা এক দিন আগে বিক্রি হয় ১৬০-১৭০ টাকা। এ পেঁয়াজও এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।
এ দিন রাজধানীতে পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারিতে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা একদিন আগে সকালে বিক্রি হয়েছে ১৪০-১৫০ টাকা কেজি। বিকালে তা বেড়ে বিক্রি হয় ১৬০-১৭০ টাকা। সকাল থেকে বিকালের ব্যবধানে বেড়েছে প্রতি কেজিতে ২০ টাকা। এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা কেজি। যা একদিন আগে বিক্রি ১৩০ টাকা। কেজিতে এর দাম বেড়েছে ১০ টাকা। আর মিসরের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৪০ টাকা। যা একদিন আগে বিক্রি হয় ১১০ টাকা। এর দাম বেড়েছে ৩০ টাকা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের একাধিক পাইকারি বিক্রেতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, বিমানে আসার পরও পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। এত পেঁয়াজ যাচ্ছে কোথায়। তারা বলেন, ১০ দিনের মধ্যে দাম কমবে জানিয়ে শনিবার বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরই সুযোগ নিয়েছেন আমদানিকারকরা।
তারা নতুন করে পেঁয়াজের বাজার আবার বেসামাল করে ফেলেছে। মন্ত্রীর কথার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বলছে, পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক হতে আরও ১০ দিন লাগবে। আর তাদের দাম বাড়ানোর ফলে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে পণ্যটির দাম আবারও বেড়েছে। যার প্রভাব পড়ছে ভোক্তা পর্যায়ে।
শ্যামবাজারের আড়তদার ও আমদানিকারক শংকর চন্দ্র ঘোষ বলেন, আড়তে পেঁয়াজ নেই। অনেকেই পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া দেশের উৎপাদিত পেঁয়াজ পুরোপুরি বাজারে আসেনি। সব মিলে এখনও সংকট রয়েছে। যে কারণে দাম আবার বেড়ে গেছে। তবে ৮-১০ দিনের মধ্যে সরবরাহ বাড়লে দাম ক্রেতার নাগালে চলে আসবে।
জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, পেঁয়াজের দাম ভোক্তার নাগালে আনতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সার্বক্ষণিক তদারকি চলছে।
সঙ্গে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও কাজ করছেন। এ সময় কোনো অনিয়ম পেলেই আমরা শাস্তির আওতায় আনছি। বিক্রেতাদের কেনা কত ও বিক্রি করছে কত দামে সেটাও মিলিয়ে দেখছি। কোনো অসঙ্গতি পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। দাম কমাতে তদারকি টিম মাঠে আছে।
সারা দেশে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে খোলা ট্রাকে ন্যায্য মূল্যে ৪৫ টাকা কেজি দরে পণ্যটি বিক্রি অব্যাহত। সঙ্গে রাজধানীর ৩৫টি স্থানের বদলে ৫০টি স্থানে খোলা ট্রাকে পেঁয়াজ বিক্রি বাড়িয়েছে টিসিবি।
উল্লাপাড়া (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, উল্লাপাড়ায় পেঁয়াজের বাজার আবার অস্থির হয়ে উঠেছে। রোববার সকালের উল্লাপাড়ায় পেঁয়াজ শূন্য হয়ে পরে। দু’দিন আগে যে পেঁয়াজে প্রতি কেজি ১৩০-১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ২ দিনের ব্যবধানে রোববার ২৩০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেখা গেছে, কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০০ টাকা।
ভাণ্ডারিয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি জানান, পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়ায় পেঁয়াজ সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাম্য হাট-বাজারসহ ছোট ছোট দোকানগুলোয় পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। রোববার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি বিদেশি পেঁয়াজ ২০০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে বেশিরভাগ দোকানে পেঁয়াজ নেই।
ভোক্তা অধিদফতরের অভিযানের পর দুই থেকে তিন দিন ১৬০-১৮০ টাকার মধ্যে থাকলেও বর্তমানে আবার চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। ছোট আকারে নতুন দেশি পেঁয়াজ বাজারে এলেও তা প্রতি কেজি ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে পুলিশের পাহারায় খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। শনিবার থেকে বিক্রি শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ে পেঁয়াজ না পৌঁছার কারণে রোববার থেকে পুলিশি পাহারায় বিক্রি শুরু করে টিসিবি।
একজন ভোক্তা প্রতিদিন সর্বোচ্চ এক কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা দরে কিনতে পারবেন। ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে টিসিবি প্রতিদিন পাঁচ টন সরবরাহ করবে।
সিলেট ব্যুরো জানায়, সিলেটের বাজারে ফের উত্তাপ ছড়িয়েছে পেঁয়াজ। পরিবহণ ধর্মঘট ও অন্যান্য কারণে হঠাৎ করে সিলেটের বাজারে আবারও সংকট দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের। এতে করে দামও বেড়েছে।
রোববার সকালে সিলেটের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কালীঘাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রচণ্ড সংকট। বড় বড় বেশ কয়েকটি দোকানে নেই পেয়াঁজ। যেসব দোকানে কিছু পুরনো পেঁয়াজ রয়ে গেছে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১৭০-১৭৫ টাকা। সূত্র: যুগান্তর