১৯শে জুন, ২০২৫

আরও ১ লাখ টন চাল আসছে মিয়ানমার থেকে

দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভারতের পর এবার মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হচ্ছে ১ লাখ ৫ হাজার টন চাল। উন্মুক্ত দরপত্রের চুক্তির আওতায় মিয়ানমার থেকে কেনা চাল ধাপে ধাপে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে।

কয়েক বছরের মধ্যে এটি মিয়ানমার থেকে চালের সবচেয়ে বড় চালান। আগামী ১৪ জানুয়ারি ‘এমভি গোল্ডেন স্টার’ নামে জাহাজটি ২২ হাজার টন আতপ চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছার কথা রয়েছে বলে কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

এদিকে টনে টনে চাল আমদানি করা হলেও চট্টগ্রামে পাইকারি ও খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়ছে না। কমছে না চালের দাম। টিআর কাবিখার বিপরীতে চাল সরবরাহ শুরু না হওয়ায় আমদানি করা চাল এখনো গুদামেই রয়ে গেছে। মূলত এ কারণেই চালের দাম কমছে না বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশীয় বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকার চাল আমদানি অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ভারত থেকে চালভর্তি জাহাজ প্রায় প্রতি মাসেই আসছে। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। বেশির ভাগ চাল উন্মুক্ত দরপত্রের চুক্তির মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। ‘এমভি তানাইজ ড্রিম’ ২৬ ডিসেম্বর ২৪ হাজার ৬৯০ মেট্রিক টন চাল নিয়ে ভারত থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। ওই দিনই খাদ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমদানি করা চালের নমুনা সংগ্রহ করেন। তা ল্যাবে পরীক্ষাও করা হয়। পরীক্ষা করে চালের গুণগতমান ভালো ও খাওয়ার উপযোগী বলে প্রতিবেদন পাওয়ার এখন খালাস চলছে।

বর্তমান সরকার মিয়ানমার থেকে ১ লাখ ৫ হাজার টন আতপ চাল কিনেছে। মিয়ানমার থেকে কেনা ১ লাখ ৫ হাজার টন চালের মধ্যে ৯০ হাজার টন চাল আসবে ৪টি জাহাজে করে। বাকি ১৫ হাজার টন চাল আসবে ৬টি ছোট গিয়ারলেস ভ্যাসেলে।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ১৪ জানুয়ারি এমভি গোল্ডেন স্টার ২২ হাজার মেট্রিক, ১৬ জানুয়ারি এমভি এমসিএল-১৯ (প্রথম ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ১৮ জানুয়ারি এমভি এমসিএল-২১ (প্রথম ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ১৯ জানুয়ারি এমসিএল-১৬ (প্রথম ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ২৪ জানুয়ারি এমভি পিভিটি অ্যারোমা (প্রথম ধাপ) ২৩ হাজার মেট্রিক টন, ১ ফেব্রুয়ারি এমভি এটিএন ভিক্টরি ২২ হাজার মেট্রিক টন, ৩ ফেব্রুয়ারি এমভি এমসিএল ১৯ (দ্বিতীয় ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ৬ ফেব্রুয়ারি এমভি এমসিএল-২১ (দ্বিতীয় ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন, ১০ ফেব্রুয়ারি এমসিএল-১৬ (দ্বিতীয় ধাপ) ২ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে আসার কথা রয়েছে। এই চাল সরবরাহ করেছে ‘সেভেন সিজ শিপিং লাইন’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।

এসব আসার পরপরই খাদ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আমদানি করা চালের নমুনা সংগ্রহ করবেন ও তা ল্যাবে পরীক্ষাও করা হবে। পরীক্ষা করে চালের গুণগতমান ভালো ও খাওয়ার উপযোগী বলে প্রতিবেদন পাওয়ার পর চাল খালাস শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ‘সেভেন সিজ শিপিং লাইন’ মালিক মোহাম্মদ আলী আকবর যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমার থেকে কেনা চালগুলো ধাপে ধাপে চট্টগ্রাম বন্দরে আসবে। ১৪ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চালের জাহাজ আসবে।

দেশে বিপুল পরিমাণ আমদানির পরও বাজারে অস্থিতিশীলতা রয়েছে; মজুত পর্যাপ্ত হলেও রহস্যজনক কারণে চালের বাজার পরিস্থিতি কিছুটা অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। চালের বাজার নিয়ে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট এবং ব্যবসায়ীরা নানা ধরনের অপতৎপরতা চালাচ্ছে। চালের কোনো সংকট না থাকলেও নানা অজুহাতে বাড়ানো হচ্ছে দাম। গতকালের হিসাব অনুযায়ী সরকারের গুদামে ৭ লাখ ৬৫ হাজার ৬৬২ টন চাল, ৪ লাখ ১৫ হাজার ২৩১ টন গম এবং ৭ হাজার ৫২৫ টন ধান মিলে সর্বমোট ১১ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৪ টন খাদ্য শস্যের মজুত রয়েছে। এর বাইরে ধান চালের মকাম, দোকান, মানুষের বাসাবাড়িতে প্রচুর পরিমাণ চালের মজুত রয়েছে।

চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক জ্ঞানপ্রিয় বিদুর্শী চাকমা বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চাল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। মিয়ানমার থেকে ধাপে ধাপে এসব আতপ চাল আসবে। এসব জাহাজ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে প্রয়োজনীয় কাজ সম্পন্ন করার পর খালাস শুরু হবে।

মন্তব্য করুন