অপসারণ ও শাস্তি দাবী:
রোস্তম মল্লিক
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশন (বিসিক) এ সরকারী নীতিমালা ভঙ্গের মহোৎসব চলছে। স্বৈরাচারের দোসরদের প্রাইজ পোষ্টিং নিয়ে উত্তেজনা না থামতেই একটার পর একটা বিধি বর্হিভুত আদেশ জারি করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছেন পরিচালক প্রশাসন শ্যমলী নবী। যুগ্ম-সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা শ্যামলী নবী স্বৈরাচারী মনোভাব ধারণ করে চলেছেন। তিনি মনে করছেন যে, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার বুঝি এখনো ক্ষমতাসীন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের আকাঙ্ক্ষার প্রতি তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই। তার স্বেচ্ছাচারি মনোভাবাপন্ন কর্মকাণ্ডে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বিসিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ। তার প্রতিটি কর্মকান্ড বেআইনী, উস্কানীমূলক, আক্রোশমূলক এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে চরম অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। এ প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ওঠা ১০ টিহ অভিযোগের আদ্যপান্ত তুলে ধরা হলো——–
অভিযোগ নং–১
তিনি সরকারের প্রচলিত আইনের প্রতি যেমনি অশ্রদ্ধাশীল তেমনি তিনি চরম আকারের স্বৈরাচারী মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি । বিদ্যমান বিধি-বিধান, নিয়ম-নীতি মানতে তিনি রাজী নন। বিসিক অফিস আদেশ স্মারক নং- ১১১৫৬ তারিখ ৭ নভেম্বর ২০২৪ তারিখের জারীকৃত আদেশে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উচ্চতর দায়িত্ব প্রদান বিষয়ক আদেশ লংঘন করা হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চলতি দায়িত্ব ও অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন নীতিমালা জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ অনুযায়ী চলতি দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠতা সংক্রান্ত গ্রেডেশন তালিকা যথাযথ ভাবে মানতে হবে। চাকরি সন্তোষজনক থাকলে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বাদ দিয়ে কনিষ্ঠ কর্মকর্তাকে চলতি দায়িত দেওয়া যাবেনা । সেই সঙ্গে যাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে, তাঁর উপরের পদের কোনো কর্মচারীকে চলতি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারীর অধীন করা যাবে না। উক্ত নির্দেশনা লংঘন করে স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণের মাধ্যমে উপব্যবস্থাপক সমমানের কর্মকর্তাদের গ্রেডেশন তালিকায় মোঃ মেরাজ উদ্দিনের অবস্থান ৪৩ নম্বরে এবং আসিফ উল হাসান এর অবস্থান ৮৯ নম্বরে থাকা সত্তেও উচ্চতর পদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে বে-আইনীভাবে।
মেরাজ উদ্দিনকে উচ্চতর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে ৪২ জনকে অতিক্রম করে, অপরদিকে আসিফ উল হাসানকে উচ্চতর পদের দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে ৮৮ জনকে অতিক্রম করে।
এটি বেআইনী, এখতিয়ার বহির্ভুত, পক্ষপাতদুষ্ট এবং উস্কানীমূলক একটি কাজ। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে মেরাজ উদ্দিন এবং আসিফ উল হাসান এর সিনিয়রদের মধ্যে মারাত্মক চাপা অসস্তোষ দেখা দিয়েছে।
অভিযোগ নং–২
স্বৈরাচারী মনোভাব পোষন করে ট্রেড ইউনিয়ন করার সাংবিধানিক অধিকার কেড়ে নিয়েছেন এবং এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছেন
(ক) অতি পছন্দের ৪ জনের প্রতি (যারা পতিত স্বৈরাচারের অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয় শ্রমিক লীগের রেজিস্ট্রেশন এর আবেদন করেছেন) পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে বিসিকের পরিচালক (অর্থ) মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস এবং উক্ত ৪ জনের প্ররোচনায় ০৮ আগষ্ট ২০২৪ তারিখের ইউনিয়ন অফিসের চাবি নিয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টির মাধ্যমে
(খ) বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, সিবিএ, রেজিঃ নং-বি-১৮১৩ এর সভাপতির পদ শুন্য ঘোষণা করে ১৬-১০-২০২৪ তারিখে প্রদত্ত মতামতের মাধ্যমে। যার কোনটি করার অধিকার বা এখতিয়ার বিসিক পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবীর নেই। অন্যদিকে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর বিধি বিধান মানতে তিনি আইনগতভাবে দায়বদ্ধ হলেও এক্ষেত্রে প্রতিটি পর্যায়ে তিনি বেপরোয়া মনোভাব প্রদর্শন করে আসছেন। ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচিত বা মনোনীত প্রতিনিধিদের, আর প্রতিনিধি নির্বাচন বা মনোনয়নের দায়িত্ব বিসিকের কর্মচারীদের।ইউনিয়নের নেতা নির্বাচনেরও এখতিয়ার বা সুযোগ কোনটি শ্যামলী নবী বা বিসিক পরিচালক মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাসের নেই।
অভিযোগ নং–৩
ফৌজদারী মামলার আসামী যে কোন সরকারী কর্মচারী সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের চাকুরী হতে সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকবেন। এ বিষয়ে সরকারী চাকরি আইন-২০১৮ এর ৩৯ ধারায় (২) নং উপধারায় সুনির্দিষ্ট বিধান আছে। মোঃ জান্নাতুল নাইম, নিরীক্ষা সহকারী, নিরীক্ষা বিভাগ, বিসিক, ঢাকা ২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ অনুযায়ী আসামীর প্রতি সমন জারীর নোটিশপ্রাপ্ত হয়েছে এবং বিষয়টি পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী অবগত হয়েও বিধান অনুযায়ী সাময়িক বরখাস্ত আদেশ জারী না করে তাকে (অভিযুক্ত নাইমকে) রক্ষার অপকৌশল হিসাবে নথি চালাচালির মধ্যে আছেন। ফৌজদারী মামলায় আদালতের সমন প্রাপ্ত হওয়ায় অভিযোগ পত্র গ্রহণ অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ হতে মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিরীক্ষা সহকারী জান্নাতুল নাইম সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকবেন। এখানে বিকল্প কোন কিছু করার সুযোগ নেই। জামিন প্রাপ্ত হওয়ার পরও জান্নাতুল নাইম মামলার পরিসমাপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সাময়িক বরখাস্ত অবস্থায় থাকবেন মর্মে বিএসআর পার্ট-১, বিধি -৭৩ এ জামিন প্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী অবস্থা বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেয়া আছে। জান্নাতুল নাইমকে বরখাস্ত করার আদেশ জারীর ক্ষেত্রে ডান-বাম করার সুযোগ না থাকলেও স্বৈরাচারী মনোভাব দেখিয়ে নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর জন্য অহেতুক নথি চালাচালির পর্যায়ে রাখা হয়েছে। পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের অন্যতম একটি নিদর্শন এটি। জান্নাতুল নাইমের অশোভন আচরণ তথা অসদাচরণের বিষয়ে বিচার চেয়ে বিসিকের ১ জন কর্মচারী মোঃ আবুল কালাম লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। জান্নাতুল নাইমের পক্ষ অবলম্বন করে ব্যবস্থা গ্রহণ হতে বিরত থাকেন এবং বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার ব্যবস্থার অংশ হিসাবে আবুল কালামের অভিযোগটি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের বরারবে উপস্থাপন করেননি পরিচালক শ্যামলী নবী।
অভিযোগ নং–৪
বিসিকের ১ জন সহকারী মহাব্যবস্থাপক যিনি সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ বুয়েট শাখার পদস্থ নেতা ছিলেন এবং যিনি স্বৈরাচার হাসিনার অন্যতম সমর্থক। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমালোচনা করে ফেস বুক পোষ্ট দেয়ার কারণে একাধিক দৈনিক পত্রিকায়, অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মোটা অংকের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে তাকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন বিসিকের পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী। ফ্যাসিবাদী হাসিনার দোসর না হলে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করতেন তিনি-এটি সুনির্দিষ্টভাবে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ। সরকারের সমালোচনা করে পোষ্ট দেয়ার কারণে ১ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট চাকুরী হতে বরখাস্ত হলেও পরিচালক (প্রশাসন) শ্যমলী নবীর কুটকৌশলে রাশেদুর রহমান নামের বিসিকের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক এখনো বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন।
অভিযোগ নং–৫
বিসিক কর্মী ব্যবস্থাপনা ভারপ্রাপ্ত শাখার সাবেক শাখা প্রধান মোঃ নাজমুল হোসেন এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে কর্মচারীদের স্বার্থবিরোধী এবং কর্মচারী বিদ্বেষী কার্যক্রম করার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বিষয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিক ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রকাশিত সংবাদের কাটিং সহ অভিযোগ দায়ের করেছিল বিসিকের ১ জন কর্মকর্তা। উক্ত অভিযোগ হতে তাদেরকে রক্ষা করার যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন পরিচালক (প্রশাসন) শ্যামলী নবী। অথচ উক্ত অভিযোগের সত্যতার আংশিক প্রমাণ পেয়েছেন মর্মে বিসিক অফিস আদেশ স্মারক নং- ১০৩০৯ তারিখ ১০ জুলাই এর মাধ্যমে মোঃ নাজমুল হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারী করেছেন পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবীর স্বাক্ষরে। তারও আগে বিসিক অফিস আদেশ স্মারক নং-১০২৫৭১ তারিখ ৭ জুলাই এর মাধ্যমে ২ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল, যার আহবায়ক ছিলেন বিসিকের ১ জন পরিচালক মোঃ আব্দুন নাসের খান, কমিটির সদস্য ছিলেন বিসিকের বিতর্কিত কর্মকর্তা সরোয়ার হোসেন, লবণ সেল প্রধান, বিসিক, ঢাকা। কমিটি রিপোর্টের আলোকে যে দুুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছে-তাদের বিরুদ্ধে কোন প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
অভিযোগ নং–৬
বিসিককর্মী ব্যবস্থাপনা শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান এবং কর্মীব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেনের বিরুদ্ধে সরকারের বিদ্যমান আউটসোর্সিং নীতিমালা লংঘণের অভিযোগে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল বিসিক শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ হতে। এতদস্বত্তেও পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী কর্মী ব্যবস্থাপনা শাখা প্রধান ও কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তার উপস্থাপিত কর্মচারী বিদ্বেষী ভুল তথ্য, মিথ্যা তথ্য, মনগড়া তথ্যের সাথে একমত পোষণ করে কর্মচারীদের স্বার্থ বিরোধী ও কর্মচারী বিদ্বেষী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। আউটসোর্সিং নীতিমালা ২০১৮ এর বিধান অনুযায়ী গাড়ী চালক এবং অফিস সহায়ক পদ দুটি আউটসোর্সিং এর আওতামুক্ত। অর্থাৎ এ দুটি পদে সরাসরি জনবল নিয়োগের বিধান আছে। এ বিষয়ে একাধিকবার নীতি মালার কপি সংশ্লিষ্ট মহল হতে সরবরাহ করা হয়েছে। বারবারই পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণ করে কার্য সম্পাদন করেছেন এ ক্ষেত্রে। আউটসোর্সিং নীতিমালা ২০১৮ এর কোথাও ড্রাইভিং সার্ভিস এবং হেল্পিং সার্ভিস নামে সেবা ক্রয়ের কোন বিধান না থাকা স্বত্তেও প্রশাসন বিভাগের কর্মকর্তাদের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে নিজেদের খেয়াল খুশী মত পদের নাম উল্লেখ করে সরাসরি নিয়োগ যোগ্য পদে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় জনবল নিয়োগের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এ ধরনের কার্যক্রম বিদ্যমান সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ২৭ ধারার বিধান মতে ইচ্ছাকৃত ভাবে ক্ষতিগ্রস্থকরণ, এখতিয়ার বহির্ভুতভাবে কাজ সম্পাদন এবং বিদ্যমান সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ৩০ এ ধারার উপধারা (এ) ও (সি) এর বিধানমতে সরকারী আদেশ বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন গুরতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ নং–৭
রাজস্বখাতের গাড়ী চালকের (১৬ গ্রেড) ১৩টি শুন্য পদের বিপরীতে সরাসরি জনবল নিয়োগের বিষয়ে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় (শিল্প মন্ত্রণালয়) কর্তৃক ৩৭৫ নং স্মারকের মাধ্যমে ছাড়পত্র প্রদান করা হয়েছিল ৪ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে। পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী কর্মচারী বিদ্বেষী মনোভাব দেখিয়ে সরাসরি নিয়োগের পরিবর্তে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় ১৩ জনকে স্থায়ী নিয়োগ দান না করে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় ৬ জনকে নিয়োগ দান করা হয়েছে। মেয়াদকাল শেষ হওয়ার কারণে পুনরায় ৬ জনকে আউটসোর্সিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দানের জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবীর স্বৈরাচারী মনোভাবের আরেকটি উদাহরণ এটি। এটি বিদ্যমান সরকারী কর্মচারী আচরণ বিধিমালার ৩০এ ধারার উপধারা (এ) ও (সি) এর বিধান মতে সরকারী আদেশ বা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন, বদলানো, সংশোধন এর মতো গুরুতর অসচারণ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
অভিযোগ নং–৮
বিসিক কর্মীব্যবস্থাপনা শাখার সাবেক ভারপ্রাপ্ত শাখা প্রধান এবং কর্মী ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আরিফ হোসেনের অসত্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপনের কারণে ৩য় শ্রেনীর কর্মচারীর পদ হতে ২য় শ্রেনীর কর্মকর্তার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত ২৭ জনকে নিদারুন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে হচ্ছে। পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েও তারা দীর্ঘদিন কাজ করছেন কর্মচারী পদের চেয়ারে বসে। পদোন্নতির আদেশের অফিস স্মারক নং- ১০২০৪ তারিখ ২৭ জুন। পদোন্নতিপ্রাপ্ত ২৭ জন কর্মকর্তাকে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত স্বস্ব কর্মস্থলে অবস্থান করে দায়িত্ব পালনের আদেশ জারী করা হয় অফিস আদেশ স্মারক ১০৩৯৮ তারিখঃ ৩০ জুলাই ২০২৪ এর মাধ্যমে। আজ অবধি তাদের ক্ষেত্রে পদায়ন আদেশ জারী করা হয়নি। বিসিক পরিচালক প্রশাসন এর এ ধরনের কার্যক্রম সরকারী দাতিত্ব পালনে চরম অবহেলা প্রদর্শনের সাথে সাথে চরম মানসিক অসন্তোষ তৈরীর অন্যতম কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তার স্বৈরাচারী মনোভাবেরও প্রমান বহন করে।
অভিযোগ নং–৯
কৌশলের আশ্রয় নিয়ে কম্পিউটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি বর্তমানে বিসিকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরিচালক অর্থ মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস, পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী এবং বিসিকের উপ-ব্যবস্থাপক মোঃ মেরাজ উদ্দিনের পারস্পারিক যোগসাজশে ৬০টি ডেস্কটপ, ০৩টি ল্যাপটপ সহ অন্যান্য কম্পিউটার এক্সেসরীজ টেন্ডারের মাধ্যমে কেনার নামে ২০টি ডেস্কটপ ক্লোন পিসি সরবরাহের মাধ্যমে এবং সিডিউল বহির্ভুত অন্যান্য কম্পিউটার এক্সেসরীজ সরবরাহ নেওয়া হয়েছে ফ্লোরা নামক একটি প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে। টেন্ডার আহবান, কার্যাদেশ প্রদান, মালামাল সরবরাহ প্রভৃতি বিষয় পর্যালোচনা করলে অনিয়ম এবং অর্থ আত্মসাৎ এর বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হবে-এতে কোন প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই। উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, পরিচালক অর্থ কামালউদ্দিন বিশ্বাস এবং পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে নিম্নমানের এবং ক্লোন পিসি গ্রহনে বাধ্য করা হয়েছে কমিটির সদস্যবৃন্দকে। আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন ২ জন পরিচালক এবং বিসিকের উপকরণ শাখা বহির্ভুত মোঃ মেরাজ উদ্দিন। অথচ দায়দায়িত্ব বহন করতে হচ্ছে বিসিকের নিরীহ কর্মকর্তাগণকে। বিশেষভাবে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, আইসিটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান হিসাবে ফ্লোরা লিমিটেড একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান। যার অবকাঠামো বহু আগেই ভেংগে পড়েছে। কার্যাদেশ প্রদান পরবর্তী কার্যক্রম যাছাই করলে বিষয়টির সত্যতার প্রমাণ মিলবে। মোঃ মেরাজ উদ্দিন বিসিক মতিঝিলস্থ ভবনের ষ্টোর রুমে রক্ষিত ২০টি পুরাতন পিসি সংগ্রহ করে তা ফ্লোরার মাধ্যমে বিসিকের নিকট সরবরাহের ব্যবস্থা করেছেন। কম্পিউটার ও আনুষাঙ্গিক সরঞ্জামাদি সরবরাহের টেন্ডার আহবানের প্রেক্ষিতে নোটিফিকেশন অব এওয়ার্ড প্রদান করা হয় ০১-২০২৪তারিখে, চুক্তি সম্পাদনের তারিখ ১৮-০২-২০২৪ (৬০ দিনের মধ্যে মালামাল সরবরাহের নির্দেশনা আছে), দফায় দফায় সরবরাহের সময়বৃদ্ধি করার পরও কম্পিউটার সরবরাহের নির্ধারিত তারিখ ছিল ১৩-০৬-২০২৪ তারিখ। দুই দফায় সময়বৃদ্ধির পরও মালামাল সরবরাহের ব্যর্থতার কারণে কার্যাদেশ বাতিল করা হয়নি রহস্যজনক কারণে। মালামাল সরবরাহের তারিখ ১০-০৭-২০২৪। পরিচালক অর্থ এবং পরিচালক প্রশাসন পারস্পারিক আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করেন যে, জরিমানা আরোপ করে বিল প্রদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। সে মতে বিল দাখিল এবং বিল প্রক্রিয়াকরণের জন্য উপকরণ শাখার উপর চাপ সৃষ্টি করে আসছেন তারা। একটি দক্ষ, অভিজ্ঞ এবং নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি তদন্তকরে প্রকৃত সত্য বের করা প্রয়োজন। বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে পরিচালক অর্থ মোঃ কামাল উদ্দিন বিশ্বাস বিসিকে যোগদান করার পর হতে তার পছন্দের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে অতিশয় নিম্নমানের কম্পিউটার টোনার (কালি) ক্রয় এবং সরবরাহ করে আসছে বিসিকের উপকরণ শাখা।
অভিযোগ নং–১০
পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবীর স্বৈরাচারী মনোভাবের কারণে ন্যায্য প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছে বিসিকে কমর্রত দুই শতাধিক কর্মচারী। সরকার ঘোষিত আর্থিক সুবিধা প্রদান বিষয়ক বেতন স্কেল গেজেট ২০১৫ এর ৭ ধারার বিধান মতে একই পদে ১০ বছর কর্মরত থাকার কারণে ১১তম বছরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির সুনির্দিষ্ট বিধান থাকা সত্ত্বেও নিম্ন বেতনভু কর্মচারীদের আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে আসছেন স্বৈরাচারী মনোভাব পোষণের মাধ্যমে এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করে। পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে ১০ বছর এবং ১৬ বছর কর্মরত থাকার কারণে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্তির বিধানে উল্লেখ করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১ তম বছরে এবং ১৭ তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্য হবেন। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেড না পাওয়ার কারণে যোগ্যতাসম্পন্ন কর্মচারীবৃন্দ আবেদন করার পর (ক্ষেত্র বিশেষে আবেদনের ২ বছর পর) আমলাতান্ত্রিক মনোবৃত্তির আশ্রয়ে বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগের মতামত চেয়ে সংশ্লিষ্ট নথি বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগে প্রেরণ করেন। বিসিকের নিরীক্ষা বিভাগ ৩১ জনের মধ্যে ৬ জন কর্মচারী উক্ত সুবিধাপ্রাপ্য মর্মে বেআইনী মতামত প্রদান করে ২১ নভেম্বর ২০২৩ তারিখে সংশ্লিষ্ট নথি প্রশাসন বিভাগে প্রেরণ করে।
সরকারের প্রচলিত বিদ্যমান আইন এস,আর,ও নং-১৮২/আইন/২০০৫ এর বিধান অনুযায়ী ৩১ জন কর্মচারীই উক্ত সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন। নিরীক্ষা বিভাগের মতামত অগ্রাহ্য করে বিসিক অফিস আদেশ স্মারক নং-৮৪৮৫ তারিখ ১৭ জানুয়ারী ২০২৪ এর মাধ্যমে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। গঠিত কমিটি নিরীক্ষা বিভাগের মতামতের সাথে একমত পোষণ করে প্রতিবেদন দাখিল করে। কমিটি সরকারের বিদ্যমান আইন আমলে না নিয়ে পরিচালক প্রশাসন এর মৌখিক নির্দেশনামতে একটি ফরমায়েশী প্রতিবেদন দাখিল করেছে। নিরীক্ষা বিভাগের মতামত এবং গঠিত কমিটির প্রতিবেদনে ৬ জন কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতিরেখে একই পদে ১০ বছর কর্মরত থাকার কারণে ১১তম বছর হতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের ক্ষেত্রে ও আদেশজারী করার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করেননি পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবী। যার কারণে সরকারী বিধান অনুযায়ী প্রায় ২০০ কর্মচারী বছরে ২০০০/- হতে ৬০০০/- টাকার আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বেতন ভাতার বকেয়া প্রদানের বিধান থাকলেও যথাসময়ে মঞ্জরী না পাওয়ায় উৎসব ভাতা এবং বৈশাখী ভাতার বকেয়া প্রদানের বিধান না থাকার কারণে উক্ত পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির ম্মুখীন হচ্ছেন বিসিকের কর্মচারীগণ। এছাড়াও আরো বেশ কিছু খাতে আর্থিক সুবিধা প্রচলিত নিয়মে মঞ্জরী প্রদান না করার কারণে কর্মচারীগণ আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছেন। উল্লিখিত বিষয়গুলোর কোনটির সাথে দ্বিমত পোষন করার বা দায় এড়ানোর সুযোগ বিসিকের পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবীর নেই। জুলাই-আগষ্ট বিপ্লবের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আকাঙ্ক্ষার বিপরীতমূখী কর্মকান্ডে লিপ্ত চরম স্বেচ্ছাচারি ব্যক্তি শহিসাবে তিনি বিসিকের সকল দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে তিনি স্বীকৃত হয়ে উঠেছেন। তাই অনতিবিলম্বে তার অপসারণ ও অতীত কৃতকর্মের তদন্ত ও শাস্তির দাবী তুলেছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ।
এসব বিষয়ে পরিচালক প্রশাসন শ্যামলী নবীর মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনি অফিসে আসেন, চা খেতে খেতে কথা বলি!!