১৮ই জুন, ২০২৫

বদলগাছীতে কালোবাজারে পাচারের সময় ওএমএসের চাল জব্দ!  

বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর বদলগাছীতে ওএমএসের চাল কালোবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে একটি ভ্যান যোগে পাচারের সময় ভ্যান চালকসহ হাতেনাতে আটক করে স্থানীয় জনতা। এ সময় তার কাছ থেকে ৩০ কেজি ওজনের ১৫টি চালের বস্তা মোট ৪৫০ কেজি চাল সহ ঐ ভ্যান চালককে আটক করে এবং উপজেলার সদর ইউনিয়নের জিধিরপুর গ্রামের বিজলি বেগমের বাড়ী থেকে ওএমএস এর আরো ৩৮২ কেজি চাল জব্দসহ বিজলি বেগমকে আটক করে প্রশাসন।
এঘটনায় চুনোপুঁটি কে আটক করলেও মূলহোতারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাহিরে রয়েছেন এমন অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
জানাযায়, সোমবার (৩ মার্চ) সকাল ৯টার সময় খাদ্য গুদাম থেকে চাল বের করে সাহেব বাজার ডিলার পয়েন্টে চাল না নিয়ে গিয়ে ঐ ভ্যান চালক কে দিয়ে কালোবাজারে পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে যেতে লাগলে বদলগাছী মিনি স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঝর্ণা রাইসমেলের কাছে পৌঁছালে স্থানীয় জনতা সেটি আটক করে।
স্থানীয় জনগণের সুত্রে জানাযায়, এবছর আনোয়ার হোসেন টগর উপজেলা সাহেব বাজার মোড়ে প্রতিদিন দেড় টন চাল ৩০ টাকা কেজি দরে সকাল ৯ থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা বাজারে চাল বিক্রি করার কথা। প্রতিদিন উপজেলার দুস্থ ও গরীব মানুষের মাঝে খোলা বাজারে ৫০ বস্তা (১৫০০ কেজি) চাল বিক্রি করার কথা থাকলেও বেশী লাভের আশায়  একটি
সিন্ডিকেট চক্র কালোবাজারে প্রতিদিন ৩০ কেজির ১৫টি বস্তা মোট (৪৫০ কেজি) চাল কালো বাজারে বিক্রি করে আসছেন এমন টাই জানান স্থানীয়রা।
এমন তথ্য স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের হাতে আসলে সকাল থেকেই খাদ্য গুদাম এলাকায় অবস্থান করেন তারা। সকাল আনুমানিক ৯ টার সময় সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে অছির উদ্দিন নামে এক ভ্যান চালক ১৫ বস্তা ওএমএসের চাল নিয়ে জিধিরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়ির দিকে রওনা হয়।
পথিমধ্যে মিনি স্টেডিয়াম সংলগ্ন ঝর্ণা রাইচমিল এলাকায় চাল বোঝায় ভ্যানটি পৌঁছালে স্থানীয় জনতা ভ্যানসহ চালককে ধরে জিজ্ঞেস করলে ভ্যান চালক বলে এই চাল ইসমাইলের বাড়ীতে নিয়ে যাচ্ছি। এর বেশী কিছু আমি জানিনা।
সরকারি চালগুলো তোমাকে দিয়ে কে পাঠিয়েছে বলে স্থানীয় জনগণ জানতে চাইলে চালক বলেন, আমাদের গোডাউনের সরদার সাইদুর আমাকে চাল গুলো সেখানে দিয়ে আসতে বলেছে । তাই নিয়ে যাচ্ছি। গত রবিবার দিনও আমি ঐ বাড়িতে চালের বস্তা দিয়ে এসেছি। আমাকে শুধু ভ্যানের ১০০শত টাকা করে ভাড়া দেয়। বিষয়টি থানায় এবং ইউএনও কে জানালে তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভ্যানে থাকা চাল জব্দ করে চালক কে আটক করে।
পরে দুপুর সাড়ে ১১ টার দিকে ঐ ভ্যান চালকের তথ্যের ভিত্তিতে সরজমিনে জিধিরপুর গ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়ী গেলে আরো সরকারি ১৪ বস্তা চাল (৩৮২ কেজি) ঐ বাড়ী থেকে জব্দ করে ইসমাইলের স্ত্রী বিজলি কে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ।
বিজলি বেগমের কাছে চাল বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গতকাল সকালে একজন ভ্যান চালক এসে ১৪ বস্তা চাল আমার বাড়ীতে রেখে চলে যায়। কি কারনে কিসের চাল এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। সাংবাদিকরা প্রথমে এসে সরকারি চালের বস্তাসহ ছবি তুলে নিয়ে গেলো। বস্তা পরিবর্তন করল কে এমন প্রশ্নে করলে ঔ নারী  বলে আমি ভয়ে বস্তা পরিবর্তন করেছি।
বদলগাছী সরকারি খাদ্য গুদামের লেবার সরদার সাইদুর বলেন, আমাকে  হাসানুজ্জামান বলেছিলো চালগুলো একটি ভ্যানে করে জিধিরপুরে পৌঁছে দিতে। আমরা লেবারের কাজ করি সব সময় কাজ না থাকায় আমরা কয়েকজন লেবার অবসর সময়ে ভ্যান চালায়। তাই আমার এক লেবারের ভ্যানে চালগুলো পাঠিয়েছি। আমরা গরীব মানুষ পড়াশুনা জানিনা আমি কি ভাবে বুঝবো এসব।
এ বিষয়ে (ওএমএস) এর ডিলার আনোয়ার হোসেন টগর বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে প্রথমে আমার কাছ থেকে খাদ্য নিয়ন্ত্রক একটি কাগজে লিখিত নেয় এর পরে হাসানুজ্জামান নামের এক ব্যবসায়ী সাহেব বাজার এলাকায় তার নিজের জায়গায় চাল বিতরণ করেন।
বেশ কিছু ব্যাক্তি নাকি স্থানটি পরিবর্তন করতে বলে ছিলেন-তাই উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারী আমকে ডেকে বলেন আপনি কলেজপাড়া এলাকার ইউসুফ আলীর নামে লিখিত দেন – সেই লিখিত নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে আমার  পরিবর্তে  ইউসুফ আলী নামের একজন ব্যক্তি দেখাশুনা করছে। সে বলতে পারবে।
ডিলার পয়েন্টে থাকা ইউসুফ বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা, হাসানুজ্জামান বলতে পারবে।
ট্যাগ অফিসার শাহরিয়া দায়সারা ভাবে বলেন,আমি সকালে ডিলারের ঘরে এসে ৩২ বস্তা চাল পেয়েছি। আর ১৮টি খালি বস্তা পেয়েছি। আমি ডিলারের ঘরে আসার পর খাদ্য গুদাম থেকে এখানে কোন চালের বস্তা আসেনি। পথিমধ্যে চাল কি হয়েছে আমি কিছু বলতে পারবোনা।
 হাসানুজ্জামান এর সাথে গণমাধ্যমকর্মীর  মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ফুড অফিসে কিছু হলে আমার উপর দোষ আসে। কি কারনে আমার উপর দোষ চাপানো হয় তা আমি সঠিক জানি না। আনোয়ার হোসেন টগর ডিলার-আপনি কেনো দেখাশুনা করেন এমন প্রশ্নে তিনি জবাবে বলেন এগুলো তারা মিথ্যা বলছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সাবরিন মোস্তারী বলেন, এটাতে আমার কোন দায় নেই।
নওগাঁ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ফরহাদ হোসেন বলেন, (ওএমএস) ডিলার চাল বিক্রি না করে, গোপনে কালোবাজারে চাল বিক্রির উদ্দেশ্যে পাচারকালে ৮৩২ কেজি চাল জব্দ করা হয়। বিষয়টি তদন্তের জন্য পোরশা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা কাজ করছে। তদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলেই এর সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বদলগাছী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহজাহান আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইসরাত জাহান ছনি বলেন, দুপুরের পর খাদ্য গুদামে সিসি টিভি ফুটেজ দেখে সত্যতা পাওয়া গেছে। মোট ৮৩২ কেজি চাল সহ দুজন কে আটক করা হয়েছে। এর সাথে কারা কারা জড়িত সকল কে আইনের আওতায় আনা হবে।

মন্তব্য করুন