৫ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

স্ত্রীর জন্য ভিক্ষা করে নিজ হাতে তৈরি করলেন চুয়াডাঙ্গার রহিম বক্সর স্বপ্নের দোতলা বাড়ি

দামুড়হুদা থেকে ফিরে আব্দুস সেলিমঃ

নেই কোন নিজের জমি জায়গা। তবুও থেমে থাকেননি চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদার ডুগডুগি বাজারে আব্দুল রহিম বক্স ওরফে নমে পাগল। স্ত্রীর জন্য মানুষের দারে দারে ভিক্ষা করার টাকা দিয়ে রাজমিস্ত্রিদের সহযোগিতা ছাড়ায় নিজে হাতে তৈরি করলেন স্বপ্নের দোতলা রাজপ্রাসাদ।

সম্রাট শাহাজাহান মমতাজকে ভালোবেসে নির্মাণ করেছিলেন তাজমহল, আর ভিক্ষার টাকায় ২৩ বছর ধরে তিলে তিলে স্ত্রী নুরীর স্মরণে স্বপ্নের রাজপ্রসাদ তৈরি করেছেন রহিম বক্স। স্ত্রীকে ভালোবেসে রাজপ্রসাদ তৈরি করলেও সেখানে থাকা হলো না স্ত্রী নুরী বেগমের। তার আগেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছেন তিনি।

ভিক্ষা করেই দর্শনা টু চুয়াডাঙ্গা ডুগডুগি বাজারে মেন সড়কের ধারে সরকারি জমির ওপর ২৩ বছর ধরে নিজ হাতে গড়ে তুলেছেন দোতলা স্বপ্নের বাড়ি।

এলাকাবাসীর মতে রহিম মানসিক ভারসাম্যহীন ও দরিদ্র হওয়ায় তাকে মেয়েসহ ছেড়ে চলে যান স্ত্রী। কিন্তু সেই থেকে তার মনে স্বপ্ন জাগে পাকা ঘর বানানোর প্রতিজ্ঞা। পিতা—মাতার কথা না শুনে গত ২০০০ সাল থেকে ২৩ বছর ধরে কোনো রাজমিস্ত্রি ছাড়াই তিলে তিলে নিজ হাতেই ‘রাজপ্রসাদ নির্মাণ করেছেন তিনি।

সেই ঘরের নিচে ২টি কক্ষ ও দোতলায় রয়েছে ২টি কক্ষ। নিচতলায় ঘরের মেঝের দেয়ালেও লাগিয়েছেন টাইলস। শোবার ঘরের কক্ষে বারান্দায় বানিয়েছেন টাইলস মোড়ানো রান্না করা চুলা।

রহিম প্রতিদিন ভিক্ষার টাকা দিয়ে অল্প অল্প করে সিমেন্ট বালি কিনে নিজ হাতে একটু একটু করে গাঁথুনি শুরু করেন তিনি।
ওই ঘরে বিলাসিতাদের মত দামী দামী জিনিসপত্র না থাকলেও সাধারণের মত তার ঘরে রয়েছে একটি কাঁচের তৈরী শোকেজ। সেই শোকেজে রয়েছে ভিক্ষা করা লুঙ্গি গামছাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র। প্রতিদিন সকালে ও বিকেলে টাইলস দিয়ে মোড়ানো চুলায় রান্না করেন তিনি। স্ত্রী মারা যাওয়ার পর থেকে তার স্মৃতি নিয়ে কোনো রকম আলু ভর্তা আর সবজি ভাত খেয়ে কোনো রকম একা একাই জীবন পারছেন তিনি।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামে এই বাড়ি বানিয়ে আলোচনায় রহিম বক্স। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচিত নমে পাগল নামে।

ঘর না থাকায় বহু বছর আগে স্ত্রী নুরী বেগম একমাত্র সন্তানসহ সংসার ছেড়ে চলে যায়। স্ত্রীকে ফিরে পেতে কুড়িয়ে, ভিক্ষা করে নিজ হাতে তৈরি করেছেন দোতলা বাড়ি। কিন্তু ঘর বানালেও ফেরেননি নুরী বেগম। পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন তিনি। রহিম বক্সের প্রতি সহানুভূতিশীল এলাকাবাসী। হাতে তৈরি ঘরটি যেকোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। বর্তমানে দোতলা বাড়টি ঝুঁকিপূর্ন অবস্থায় আছে। যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা।

কিন্তু নিজ হাতে গড়া ঘর ছেড়ে কোথাও যেতে রাজি নন ৫৫ বছর বয়সী রহিম বক্স।
সড়ক বিভাগের বার বার উচ্ছেদ অভিযান হলেও প্রাণহানি এড়াতে দোতলায় উঠে বসে থাকতেন।

কেউ তাকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা বললে রহিম বক্স বলেন, আমি এখানে থাকবো কারো কিছু করার নেই। আমি আমার স্ত্রীর স্মৃতি নিয়েই এখানে জীবন পার করে দেবো।

মন্তব্য করুন