৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

গর্ভাবস্থায় সুস্থ থাকতে যেসব পরীক্ষা জরুরি

গর্ভকালীন নারীর বিভিন্ন ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। পুরো গর্ভকালীন সময়জুড়ে গর্ভবতী মায়ের হরমোনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এ সময় গর্ভবতী মায়ের শরীরে হরমোন পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন আসে শরীরবৃত্তীয় গঠনেও। নিরাপদ গর্ভাবস্থা হবু মা এবং তার অনাগত সন্তানের জন্য জরুরি।

প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি মনে করেন, মায়ের গর্ভকাল নিরাপদ করতে নিয়মিত চেকআপের পাশাপাশি পরীক্ষা–নিরীক্ষা করা খুব প্রয়োজন। এইসব পরীক্ষার মাধ্যমে মায়ের শারীরিক অবস্থা, শিশুর অবস্থান বুঝতে পারা যায়।

মায়ের গর্ভকাল নিরাপদ রাখতে যেসব পরীক্ষা করা জরুরি। সেগুলো হলো–

১. প্রেগন্যান্সি টেস্ট। এই টেস্ট দিয়ে নারীর গর্ভকালের প্রথম পরীক্ষা করা হয়। কেউ গর্ভধারণ করলে প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে নির্গত হরমোন বিটা HCG-এর উপস্থিতির কারণে এ টেস্ট পজিটিভ হয়। প্রস্রাব ছাড়াও রক্তরস দিয়ে এই টেস্ট করা যায়। পজিটিভ হলে বুঝতে হবে গর্ভধারণ হয়েছে। প্রেগন্যন্সি টেস্ট পজিটিভ হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

২. মায়ের রক্তের শর্করা বা সুগার টেস্ট। গর্ভকাল নিরাপদ রাখতে এই টেস্ট জরুরি। ডায়াবেটিস থাকলে গর্ভকালীন এবং প্রসবকালীন অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাই নিরাপদ প্রেগন্যান্সি এর অন্যতম শর্ত হল রক্তে শর্করা বা সুগারের পরিমাণ টেস্ট করা। মায়ের ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করাতে হবে।

৩. মায়ের ব্লাড গ্রুপ পরীক্ষা। নিরাপদ প্রেগন্যান্সির ক্ষেত্রে এই পরীক্ষাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। মায়ের ব্লাড গ্রুপ পজিটিভ হলে সমস্যা নেই, তবে মায়ের গ্রুপ নেগেটিভ আর বাবার গ্রুপ পজিটিভ হলে জটিলতার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।

৪. নবজাতকের ব্লাড গ্রুপ টেস্ট। প্রসবের পর নবজাতকের নাভি থেকে রক্ত নিয়ে এই টেস্ট করা হয়। নবজাতকের গ্রুপ নেগেটিভ হলে সমস্যা নেই, কিন্তু পজিটিভ হলে প্রসবের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মা-কে একটি ইনজেকশন দিতে হয়।

৫. গর্ভাবস্থায় আল্ট্রাসনোগ্রাম পরীক্ষা। গর্ভকালীন মায়ের কমপক্ষে ৩ বার আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়। প্রথমবার গর্ভের ৭- ১২ সপ্তাহের মধ্যে, দ্বিতীয়বার ১৮- ২৬ সপ্তাহের মধ্যে এবং তৃতীয়বার ৩২- ৩৭ সপ্তাহের মধ্যে। এ ছাড়া গর্ভধারণের ৭-৮ সপ্তাহের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বাচ্চার অবস্থান, জীবন ও সঠিক গর্ভকাল নিশ্চিত করা হয়।

৬. এইচআইভি টেস্ট। গর্ভাবস্থায় মায়ের এই টেস্ট করাও জরুরি। গর্ভবতী মা যদি এই ভাইরাসটির বাহক হয়ে থাকেন, তবে রক্তের মাধ্যমে গর্ভস্থ শিশু এটি দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। গর্ভাবস্থায় রক্তে এইচ আই ভি ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পরলে, শিশুর সংক্রমণের ঝুঁকি কমানোর চিকিৎসা রয়েছে।

৭. হেপাটাইটিস-বি টেস্ট। গর্ভাবস্থায় মায়ের এ পরীক্ষা করা জরুরি। যদি মা এই ভাইরাসটির বাহক হয়ে থাকেন বা গর্ভাবস্থায় এটি দ্বারা সংক্রমিত হোন, তাহলে গর্ভস্থ শিশুও এটি দ্বারা সংক্রমিত হতে পারে। হেপাটাইটিস– বি প্রতিরোধের জন্য শিশু জন্মের পর টিকার ব্যবস্থা আছে।

৮. গর্ভাবস্থায় ইউরিন স্টেট জরুরি। এই টেস্টের মাধ্যমে জানা যাবে হবু মা কতটুকু সুস্থ আছেন। গর্ভাবস্থায় মায়ের ইউরিনে অস্বাভাবিক জীবাণুর উপস্থিতি মূত্র সংবহন তন্ত্রের ইনফেকশন নির্দেশ করে।

মন্তব্য করুন