২২শে জুন, ২০২৫

চাচির মিথ্যা মামলায় স্কুলছাত্র বাতিজা কারাগারে, হতাশ সুশীলসমাজ

স্টাফ রিপোর্টার: মৌলভীবাজার জেলার সদর উপজেলার কণকপুর ইউনিয়নের নাগড়া গ্রামে পারিবারিক জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে এক সৌদি প্রবাসীর পরিবারের ওপর হামলা, হয়রানি এবং ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা মামলায় এসএসসি পরীক্ষার্থী সাহেল ইসলাম সোহানকে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন সাহেলের আপন চাচা মাহফুজুর রহমান মোবারক ও চাচি রত্না বেগম।

‎ভুক্তভোগী হালিমা ইসলাম (৪৩) জানান, তার স্বামী সৌদি প্রবাসী সামছুল ইসলাম। তাদের একমাত্র ছেলে সাহেল ইসলাম সোহান (১৭) ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী। হালিমার অভিযোগ, ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মাহফুজুর রহমান মোবারক ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে সাহেলের উপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এতে সাহেল গুরুতর আহত হয়ে একটি দাঁত হারায়। এ ঘটনায় মৌলভীবাজার মডেল থানায় মামলা করা হয় (মামলা নং-২০/৩১০, তারিখ-১৩/১০/২০২৪)।

‎তবে মামলার তদন্তে নিযুক্ত সাব-ইন্সপেক্টর পার্থ রঞ্জন চক্রবর্তীর নিষ্ক্রিয়তায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বরং অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্যরা এখনো প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং সামাজিক মাধ্যমে সাহেল ও তার পরিবারকে নিয়ে চালাচ্ছে অপপ্রচার।

‎এরপর চলতি এসএসসি পরীক্ষার সময়, ১২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে, মোবারক তার সহযোগী মাসুক (ভূমিদস্যু মাসুক নামে পরিচিত), কাইয়ুম, কামাল, ইকবাল ও সোয়েবসহ ওই পরিবারের বাড়িতে হামলা চালায়। হালিমা ইসলাম ও তার কন্যা ছাবিলা ইসলাম (১৪) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন এবং বাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। বাড়ি ফিরে সাহেলও হামলার শিকার হয় তাকে কাঠের টেবিল দিয়ে আঘাত করা হয়।

‎এ ঘটনার জেরে সাহেলের আত্মরক্ষায় অভিযুক্ত মোবারকের চোখে সামান্য আঘাত লাগলে, এটিকে কেন্দ্র করে পরদিন ১৩ এপ্রিল মোবারকের স্ত্রী রত্না বেগম সাহেল, তার মা ও প্রবাসী বাবার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন, যার ভিত্তিতে ১৪ এপ্রিল সাহেল ও হালিমাকে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে শিশু আদালত ১৬ ও ১৭ এপ্রিল তাদের জামিন মঞ্জুর করে।

‎জামিনে মুক্ত হলেও পরিস্থিতির ভয়ে হালিমা তার সন্তানদের নিয়ে স্বজনদের বাড়িতে আশ্রয় নেন। এ সুযোগে প্রতিপক্ষ তাদের বাড়িতে তালা মেরে দেয়। হালিমা অভিযোগ করেন, একাধিকবার থানায় অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি।



‎সবশেষে, সাহেলের বিরুদ্ধে “হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের” অভিযোগ এনে তার জামিন বাতিলের আবেদন করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মনোজ কুমার সরকার মনগড়া প্রতিবেদন জমা দিলে আদালত ২৬ মে ২০২৫ তারিখে সাহেলের জামিন বাতিল করেন এবং তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

‎বর্তমানে সাহেল কারাগারে, আর তার মা হালিমা ইসলাম ও বোন ছাবিলা আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রিত। হালিমা বলেন, একদিকে আমার মেধাবী এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলে মিথ্যা মামলায় জেলে, অন্যদিকে আমি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদের জীবনে এখন শুধু আতঙ্ক।

‎তিনি প্রশাসনের কাছে নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা, ঘরের তালা খুলে পুনরায় বসবাসের অধিকার, এবং দায়েরকৃত মামলাগুলোর সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান। একইসাথে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

‎মৌলভীবাজার সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাহেল সম্পর্কে তার শিক্ষক ও সহপাঠীরা জানান, সে একজন মেধাবী ছাত্র এবং চলতি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছে। হঠাৎ করে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একটি সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা যার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

‎তারা জানান, শুধুমাত্র পারিবারিক শত্রুতার কারণে সাহেলকে এ মামলায় জড়ানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। তার ভবিষ্যৎ যেন ধ্বংস না হয়, সে জন্য মাহামান্য আদালতের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

‎এদিকে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা জানান, রত্না বেগম ও মাহফুজুর রহমান মোবারকের কাছ থেকে একাধিকবার প্রতিক্রিয়া নেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তারা কোনো বক্তব্য দেননি। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে পরিকল্পিতভাবে সাহেলের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের চেষ্টা করা হচ্ছে, তা তারা অকপটে স্বীকার করেন।

‎বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা, প্রভাবশালীদের দাপট এবং পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তাহীন করে তোলে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের হস্তক্ষেপ জরুরি।

মন্তব্য করুন