আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত থেকে তামাকপণ্যের ওপর কার্যকর কর আরোপ ও মূল্যবৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করলে একদিকে যেমন তামাকজনিত মৃত্যু হ্রাস পাবে, তেমনি সরকারের রাজস্ব আয়ও উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
শনিবার (২৪ মে) ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয় “আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তামাক কর প্রস্তাবনা” শীর্ষক এক আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের সহ-সভাপতি ডা. মোহাম্মদ খলিলউল্লাহ। স্বাগত বক্তব্য দেন মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মো. মোখলেছুর রহমান।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের সমন্বয়কারী শরিফুল ইসলাম। প্রবন্ধে বলা হয়, তামাকপণ্যের ওপর বিদ্যমান কর কাঠামো সংস্কার করলে দেশে সিগারেট ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। এতে প্রায় ২৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবেন এবং ১৭ লাখ তরুণ ধূমপান শুরু করতে নিরুৎসাহিত হবেন। দীর্ঘমেয়াদে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ সম্ভব হবে।
এছাড়া প্রস্তাবিত কর কাঠামো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকার প্রায় ৬৮ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারবে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৪৩ শতাংশ বেশি।
প্রস্তাবে নিম্ন ও মধ্যম স্তরের সিগারেট একত্র করে প্রতি ১০ শলাকার খুচরা মূল্য ৯০ টাকা নির্ধারণ, উচ্চ স্তরে ১৪০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা এবং প্রিমিয়াম স্তরে ১৯০ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি সিগারেটের খুচরা মূল্যের ওপর ৬৭% সম্পূরক শুল্ক, ১৫% ভ্যাট এবং ১% স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ বহাল রাখার আহ্বান জানানো হয়।
সভায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক, গ্লোবাল টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক ফেরদৌস মামুন, বাংলা টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এম এম বাদশাহ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি এবং বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি নাজমুল হাসান মাহমুদ।
বক্তারা বলেন, “তামাকপণ্যের দামের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্য সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।” তারা আরও বলেন, “আগামী প্রজন্মকে তামাকের করাল গ্রাস থেকে রক্ষা করতে কার্যকর কর ও মূল্যবৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই।”
