সজীব আকবর, সিনিয়র প্রতিবেদক:
আরব্য রজনীর রূপকথার এক ক্যারিশমাটিক মহানায়ক গণপূর্ত ঢাকা ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব । তার মোহনী শক্তি, দামিদামি উপঢৌকন আর কড়কড়ে বান্ডিলের যাদুতে ধরাশায়ী প্রধান প্রকৌশলী থেকে ঝাড়ুদার,পিয়ন, চাপরাশি থেকে পুরো গণপূর্ত অধিদপ্তর।
তবে তাকে এখানে মাহবুব নামে তেমন কেউ চিনেনা, তাকে চেনে ডিপ্লোামা মাহবুব নামে। আর অধস্তন কর্মচারীরা বলে “ডিপ্লোমা স্যার” । গণপূর্ত অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব ডিপ্লোমা মাহাবুব নামেই সমধিক পরিচিত।
এই নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব সম্প্রতি ঢাকা মেট্রো ডিভিশন থেকে বদলি হলেও প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তারকে তার ম্যাজিক ল্যাম্পের ছোঁয়ায় বস করে আবারও আগের জায়গায় ফিরে এস হয়েছেন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।।
মাস কয়েক আগেও প্রধান প্রকৌশলীর ”চোখের বালি”তে পরিণত হওয়া মাহাবুব হঠাৎই হয়ে ওঠেছেন তাঁর ”নয়নের মণি”।। প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবকে ডাকতেন ‘ডিপ্লোমা’ বলে। নেপথ্যে রয়েছে পাবলিক লাইব্রেরী, হাইকোর্টসহ কয়েকটি কাজের টেন্ডার।
সেসব কাজ প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারের পছন্দের লোককে দিয়ে তিনিই এখন প্রিয়জন হয়ে উঠেছেন এই শামীমের। যদিও গোপনে কমিশন বাণিজ্য হয়েছে শতশত কোটি টাকা।
এদিকে পাবলিক লাইব্রেরীর টেন্ডারে সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে কার্যাদেশ প্রদানের মতো দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরেও বদলি কাটিয়ে পূর্বের চেয়ারেই মাহবুবকে বসিয়েছেন গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আক্তার।
কেনো বসিয়েছেন সেটা জানে প্রধান প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব নিজেও। তবে গণপূর্তের অন্য সকলে বিষয়টি জানলেও তাদের পদপদবী আর কালো টাকার দুর্বার শক্তির কাছে অধস্তনরা শুধুই হুকুমের গোলাম।
জানা যায়, ঢাকা ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব এসএসসি পাসের পর পলিটেকনিক থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। পরে ডুয়েট থেকে বিএসসি পাস করে ২১তম বিসিএস-এ যোগ দেয়। যোগদানের পর থেকে নানা অপকর্মের হোতা এই লুটেরা মাহাবুব বেশিরভাগ সময়ই ঢাকাতে চাকুরি করছেন।
উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী হিসেবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নগর গণপূর্ত বিভাগ, নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে নারায়ণগঞ্জ, মেডিকেল গণপূর্ত বিভাগ এবং এই মুহুর্তে এলাকার বিচারে সবচেয়ে বড়ো ডিভিশন-৪ এর নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এখানে তার নির্ধারিত মেয়াদ তিন বছর অতিক্রম হয়েছে গত জুন মাসে। তারপরেও শামীমের আস্থাভাজন হওয়ায় এখনও টিকে আছেন, রয়েছেন বহাল তবিয়তে। চলতি দায়িত্বেও প্রধান প্রকৌশলী হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে বড় অংকের লেনদেন।
গণপূর্তের ঢাকা বিভাগ-৪ এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বার্ষিক বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছে নগদ টাকার বিনিময়ে। মোহাম্মদ শামীম আখতারের সময়ে বরাদ্দ হওয়া এই টাকা কোথায় খরচ করা হয়েছে তার হিসাব দিতে পারবেন না নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব। বিষয়টি তদন্ত করলে ভুয়া বিল-ভাউচারের বিষয়ে প্রমাণ পাওয়া যাবে।
মাহাবুবের এমন ভুয়া বিল-ভাউচার আর টেন্ডারের বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সতীনাথ বসাক প্রশ্ন তুললে বিভিন্ন পত্রিকার সাংবাদিকদের টাকা দিয়ে সতীনাথের অফিস ডেকোরেশন নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে কোনঠাসা করে রাখেন।
অথচ গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতারসহ গণপূর্তে একডজন অফিসারের অফিস ডেকোরেশন করেছেন এই দুর্নীতিবাজ মাহাবুব। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি চরম বিদ্বেষী শামীম আখতারের আস্কারা পেয়েই মাহাবুব একের পর এক দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। মাহাবুব সম্প্রতি পাবলিক লাইব্রেরী ভবনের সাড়ে তিনশ’ কোটি টাকার টেন্ডার করেছেন।
নিয়ম অনুযায়ী আগ্রহী দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশ কম দরপত্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা। এই কাজ সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে কাজ দেয়া হয়েছে। সে হিসাবে সাড়ে ১৮ শতাংশের বেশি টাকা খরচ হচ্ছে সরকারের।
নেগোসিয়েশনের মাধ্যমে এনডিই নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। যাতে সরকারের অতিরিক্ত খরচ হবে প্রায় ৫৬ কোটি টাকা। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির এই সময়ে এতো বেশি টাকা কার্যাদেশ দিয়ে সংশ্লিষ্টরা অতিরিক্ত দরের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছেন।
এই প্রকল্প থেকে প্রধান প্রকৌশলী শামীম আখতার তার সহযোগী কিংডম বিল্ডার্সের নুসরতের মাধ্যমে সাত কোটি টাকা নিয়েছেন। যার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এই মাহাবুব। এরপর থেকেই সকাল বিকাল মাহাবুবকে দেখা যায় প্রধান প্রকৌশলীর আশেপাশে। প্রধান প্রকৌশলীর স্টাফ অফিসার মাহফুজ আর মাহাবুব মিলেই চালান প্রধান প্রকৌশলীর পুরো কার্যক্রম।
এদিকে স্টাফ অফিসার মো. তাজুল ইসলাম এর সাথে কথা হলে বলেন, পাবলিক লাইব্রেরীর টেন্ডারে সাড়ে আট শতাংশ বেশি দরে দেয়া হয়েছে। স্টাফ অফিসার হিসেবে তাকেই এসবের কাগজপত্র ঠিকঠাক করতে হয়ে। তবে এতে তার বিন্দু মাত্রও স্বার্থ নেই বলে এই প্রতিবেদকের সামনে মৌখিক স্বীকারোক্তি বা সাফাই গায়তে থাকেন।