১৯শে জুন, ২০২৫

পান্না মিয়ার ঘুষ দুর্নীতি আর লুটপাট বাণিজ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, চুয়াডাঙ্গা:

রাজস্ব সার্কেল দামুড়হুদা উপজেলা ভূমি অফিসের নিয়ন্ত্রণাধীন দামুড়হুদা ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পান্না মিয়ার দপ্তর এখন পরিণত হয়েছে ব্যাপক ঘুষ দূর্নীতি আর রমরমা বাণিজ্যের অভয়ারণ্যে।
প্রতি কর্মদিবসে তাকে দেখা যায় দালাল পরিবেষ্টিত অবস্থায় রাত ৮ টা ১০ টা বা কখনো কখনো মধ্যরাত পর্যন্ত ভূমি অফিস চালু রেখে ব্যস্ত সময় পার করতে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগে জানা যায়, নামজারীতে সমস্যা আছে বলে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে টেনে নেন ১ হাজার থেকে শুরু করে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৫ বা ২০ হাজার টাকা। ভায়া দলিলের ক্ষেত্রে হাতিয়ে নেন ১৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা।
পুড়াপাড়ার ভূক্তভোগী এক কৃষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন আমার নামের বানান ভুল আছে বলে আমার কাছ থেকে ডিসিআরএর টাকা বাদেও হাতিয়ে নিয়েছে ৫ হাজার টাকা।

মূলত এখানে ঘুষ ছাড়া মেলেনা সেবা, নড়েনা ফাইল।

পান্না মিয়ার মূল ধান্দা নামজারী, এপি, ভিপি, এলএ, পেরীফেরীভূক্ত, ফিরনিবাস বরাদ্দ নবায়ন ও তদন্ত রিপোর্ট নামের রমরমা বাণিজ্য।
আর এসব অবৈধ কর্মকাণ্ডে তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে তাঁর সৃষ্ট সংঘবদ্ধ দালাল সিন্ডিকেট ও তার কথিত সহকারী।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, সে দালালদের সাথে নিয়ে বিকাল থেকে শুরু করে রাত ৮/১০টা বা কোনো কোনোদিন মধ্যরাত পর্যন্ত অফিস করে থাকেন।
এসিল্যান্ড সাহেবের কঠোর নির্দেশ গ্রাহক ছাড়া কোনো দালাল ভূমি অফিসে ঢুকবে না। অথচ এই আদেশ তোয়াক্কা করছে না ভূমি সহকারী কর্মকর্তা পান্না মিয়া। তার চলন বলন আর ভাবভঙ্গি দেখলে মনে হবে, এটি কোনো সরকারি অফিস নয়, যেনো পান্না মিয়ার পৈত্রিক ভিটা।

তাই গভীর রাত পর্যন্ত এ অফিসে দেখা যায় কথিত কতিপয় দালাল ও দলিল লেখক সমিতির লেখকদের সাথে বিভিন্ন কাজের বিষয়ে দরকষাকষি করতে।

একাধিক ভুক্তভোগীরা বলেন, পান্নার অফিসে দালাল বা দলিল লেখকদের না ধরলে এই অফিসে গ্রাহকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়না।

এই ধান্দাবাজ পান্না মিয়া বিগত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে নিজেকে শেখ হাসিনার কাছের মানুষ ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সন্তান পরিচয় দিয়ে তার কর্মস্থলগুলোতে নিজস্ব ক্ষমতার বলয় সৃষ্টি করে গড়ে তুলেছেন নিজস্ব সিন্ডিকেট।

এতে ব্যক্তিগতভাবে ভূমি কর্মকর্তা পান্না মিয়া লাভবান হলেও সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।

তাই এই অফিস থেকে ভূমি কর্মকর্তা পান্নাকে অনতিবিলম্বে অপসারণ ও তাঁর অবৈধ সম্পদের খোঁজ তল্লাশী নিতে উর্ধতন কর্তৃপক্ষ সহ অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল।।

পান্না মিয়ার প্রসঙ্গে দামুড়হুদা এসিল্যান্ড সাহেবের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ভূমি অফিসে গ্রাহক ছাড়া কোনো দালাল ঢুকবে না, এটা আমি সব ভূমি অফিসকেই কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছি।
আর ধুরন্ধর ভূমি কর্মকর্তা পান্না মিয়া মধ্যরাত পর্যন্ত দালাল পরিবেষ্টিত অবস্থায় কি এমন কাজ করেন, এ প্রসঙ্গে এসিল্যান্ড মহোদয় বলেন ” এটা আমার জানা ছিলোনা “। তবে আপনি আমাকে অবহিত করে ভালো করেছেন, কিন্তু এই মূহুর্তে আমি কার্পাসডাঙ্গা বাজার পরিদর্শনে আছি, ফিরে যেয়ে ওইসব দালাল ও রাতে অফিস করার বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো।

এই নিউজের মূল বিষয়বস্তু জানিয়ে ভূমি কর্মকর্তা পান্না মিয়ার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, এখানে এই অফিসে তেমন কোনো কাজ নেই। আর নামজারী প্রসঙ্গে বলেন এখানে হাতে কলমে কোনো নামজারি হয়না। এখানে সব ই-নামজারী, সবকিছু হয় অনলাইনে।

তো সব কাজ যখন অনলাইনেই হয় তখন দলিল লেখক আর দালালদের সাথে নিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ভূমি অফিস চালু রেখে কি করেন? প্রতিবেদকের এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর না দিয়ে পান্না৷ মিয়া প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।

মন্তব্য করুন