১৯শে জুন, ২০২৫

মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে বাবু হাওলাদারের অভিনব বাণিজ্য

সজীব আকবর, সিনিয়র প্রতিবেদক:

রাজধানীর মোহাম্মদপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সাব রেজিস্ট্রারের কথিত সহকারী বাবু হাওলাদার নিজেই রমরমা ঘুষ দুর্নীতি ও অভিনব বাণিজ্যের মাস্টারমাইন্ড। আর সাব রেজিস্ট্রার শুধু বাবুর চোখের ইশারায় করেন দলিলে স্বাক্ষর। এসব ঘুষ দুর্নীতিতে বাবুকে সার্বক্ষণিক সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছে দলিল লেখক সমিতির কতিপয় নেতা ও অফিস স্টাফরা। মূলতঃ এখানে বাবু হাওলাদরই দূর্নীতির বরপুত্র, বাদবাকি সব হুকুমের গোলাম।। ফলে বাবু হাওলাদারের চাহিদা পূরণ করতে না পারলে কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও ভুক্তভোগীদের ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।

সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে সরকারি নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন দেখিয়ে, সাব-কবলা দলিলের পরিবর্তে হেবাবিল এওয়াজ, অসিয়ত নামা, ঘোষণাপত্র, আমমোক্তার নামা, দানপত্র দলিল রেজিষ্ট্রি করে সরকারকে ধোকা দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। যুবলীগের রাজনীতির সাথে সংযুক্ত থাকা বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতেও বাবু হাওলাদার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সাথে গভীর শলাপরামর্শে লিপ্ত থাকতেন বলে সূত্র জানায়।।এ প্রসঙ্গে দলিল লেখক সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৫ আগস্ট দেশের সার্বিক পেক্ষপট পরিবর্তনে সপ্তাহ খানেক চুপচাপ থাকলেও আবারো বাবু হাওলাদার স্বমহিমায় আবির্ভূত।

ভূক্তভোগীরা বলেন দলিল প্রতি সেরেস্তার নামে 20 থেকে 30 হাজার টাকা নর্মালে আদায় করা হচ্ছে। আদায় কৃত অতিরিক্ত এসব টাকা দলিল লেখক সমিতি, মসজিদ, মন্দির, কতিপয় রাজনৈতিক নেতা ও সাব রেজিস্ট্রারকে যৎসামান্য কিছু দিয়ে বাকি টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ ভাটোয়ারা করে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। এ অফিসে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১ হাজার থেকে ১২শ দলিল রেজিস্ট্রি হয়ে থাকে। এর মধ্যে বেশির ভাগ দলিল হেবাবিল এওয়াজ, আমমোক্তার নামা ও দানপত্র ও ঘোষণাপত্র দলিল।

সম্প্রতি সরেজমিনে ভুক্তভোগীদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, দলিলের ফি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করলেও সেরেস্তা (অতিরিক্ত ফি) বাবুর ইশারাছাড়া ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করেন না। চাহিদা মতো টাকা না পেলে বিভিন্ন কাগজপত্রের অজুহাতে হয়রানি করা হয়। এক্ষেত্রে দালাল বা দলিল লেখকগণ বাবু হাওলাদারের হাতে ক্যাশ বুঝে দিলে তিনি দলিলের মাথায় দেন বিশেষ সাংকেতিক চিহ্ন, আর এসব দলিল সাব রেজিস্ট্রার স্বাক্ষর করেন চোখ বন্ধ করে। তবে কাগজপত্রে ঝামেলা থাকলে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা টাকা ঘুষ দিতে হয়। আবার কখনো কখনো ভূক্তভোগীকে বোকা বানিয়ে ” এসব দলিল কস্মিনকালেও রেজিস্ট্রি সম্ভব নয়” মর্মে নাটক সাজিয়ে বাবু হাওলাদার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গোপনে লুটে নেন লাখ লাখ টাকা।

আমাদের প্রতিনিধি জানান, প্রতিদিন ডিউটি শেষে বাসায় যাওয়ার পথে সাব রেজিস্ট্রার ও বাবু হাওলাদারের ব্যাগ চেক করলেই দুদক অবৈধ টাকাসহ এদেরকে আটক করতে পারবে।

মন্তব্য করুন