১৮ই জুন, ২০২৫

রংপুর কাউনিয়ায় পেঁয়াজের বাম্পার ফলনের পরেও লোকসানের শঙ্কায় চাষিরা…

পেঁয়াজ উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ রংপুরের কাউনিয়ায় বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। পেঁয়াজের দাম পাওয়া নিয়ে তিস্তার জেগে উঠা চরে স্বপ্ন বুনে ছিল চাষিরা, সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার উপক্রম।
মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধের দাবী তাদের। আমদানি করলে তাদের উৎপাদিত পেঁয়াজের দাম কমে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন। উপজেলার তিস্তানদী বেষ্টিত ১৭টি চরগ্রামে নদীর জেগে উঠা চরে ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে। তবে সার, সেচ, বীজ, শ্রমিকের মজুরি ও জমি তৈরীতে বেশি খরচ হওয়ার বিপরীতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় লোকসানের শঙ্কায় রয়েছেন চাষিরা। ইতোমধ্যে জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু হয়েছে।
কৃষকরা জানান, ন্যায্য মূল্য না পেলে তাদের পথে বসতে হবে। সরকারের কাছে দাবি, ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি না করার। ঢুসমারা চরের কৃষক তাজুল ও গনাই চরের দুদু মিয়া জানান, পেঁয়াজ চাষে খরচ বেশি। আমরা ঋণ করে চাষ করেছি। অনেকে আবাদ করতে গিয়ে গরু ছাগল বিক্রি করেছেন। ভালো দাম না পেলে তাদের পথে বসতে হবে। এ ছাড়া সরকারী ভাবে পেঁয়াজ ক্রয় এবং সংরক্ষণাগার তৈরির পাশাপাশি বাজার মনিটরিংয়ের দাবি তাদের।
সরেজমিনে বিভিন্ন চর ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে পেঁয়াজ উত্তোলন শুরু করেছেন চাষিরা। দিনব্যাপী প্রখর রোদে কঠোর পরিশ্রম করে মাঠ থেকে পেঁয়াজ তোলা ও পরিষ্কার করে ঘরে তোলার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। পুরুষেরা মাঠ থেকে পেঁয়াজ তুলে এনে দিচ্ছেন মহিলারা সেই পেঁয়াজ পরিষ্কার করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করছেন।
পেঁয়াজের দাম ন্যুনতম ৪০ থেকে ৫০ টাকা না পেলে লোকসান গুণতে হবে চলতি মৌসুমে। কিন্তু দাম নিয়ে হতাশ তারা। রংপুরের ৮উপজেলার মধ্যে কাউনিয়ায় ব্যাপক হারে পেঁয়াজের চাষ হয়েছে।
 কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি মৌসুমে এক কেজি পেঁয়াজ উৎপাদন করতে কৃষকের খরচ হয়েছে ১৯ টাকা। বিঘাপ্রতি খরচ দাঁড়ায় ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা।
গদাই গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জমি থেকে পেঁয়াজ তুলে বাজারে বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০০-৯০০ টাকা দরে। এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে আমাদের লোকসান গুনতে হবে। কৃষক আনারুল জানান গতবছর পেঁয়াজের বাজার-দর ভালো থাকায় আমরা লাভবান হয়ে ছিলাম। কিন্ত এ বছর পেঁয়াজের বাজার খুবই নিচে নেমে গেছে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করলে দাম কমার সম্ভাবনা থাকে।
তাই এ সময় পেঁয়াজ আমদানি না করতে সরকারের প্রতি দাবী কৃষকের। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ তানিয়া আক্তার জানান, ন্যায্য মূল্য নিশ্চিতে একসঙ্গে পেঁয়াজ উত্তোলন না করে, ধাপে ধাপে উত্তোলন করার পরামর্শ দেয়া সহ বাড়িতে সংরক্ষনের উপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, উপজলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্য মাত্রা ২১৮ হেক্টর ধরা হলেও চাষ হয়েছে ২২০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ৩০৬৯ মেঃটন। চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। কৃষি বিভাগ সংরক্ষণ ব্যবস্থায় গুরুত্বারোপ করছে।
খবরের আলো/তানভীর সোহেল

মন্তব্য করুন