৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫

রেলের জমি দখল করে মার্কেট নির্মাণ, ঘুষের বিনিময়ে নীরব রেল কর্মকর্তারা


শাহবাজ জামান, খুলনা:

অভ্যুত্থান-পরবর্তী আইনশৃঙ্খলার অবনতির সুযোগে খুলনায় রেলওয়ের জমি দখল করে গড়ে উঠছে একের পর এক মার্কেট, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোনো বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই লাখ লাখ টাকায় হাতবদল হচ্ছে এসব দোকান। অভিযোগ রয়েছে, ঘুষের বিনিময়ে রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিষয়টি জেনেও চুপ রয়েছেন।

‎স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের তদারকিতে রেলের জমি দখল হয়ে যাচ্ছে। খুলনা রেলওয়ে হাসপাতাল রোডের চিকিৎসক বাসভবন ‘ডাক্তার বাড়ি’ ও পাশের রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ভেঙে মার্কেট তৈরি করা হয়েছে। জোড়াগেট রেলওয়ে কলোনীর ভেতরের একাধিক পুকুরও দখল করে ভরাট ও মাছ চাষ করছেন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা।

‎অভিযোগ উঠেছে, রেলের খুলনা কাছারির কানুনগো মো. সহিদুজ্জামান দখলদারদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে তা পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের পাকশীর কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেন। জানা যায়, অবৈধ আয়ের ভাগ পাচ্ছেন পশ্চিমাঞ্চল ভূ-সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তারাও।

‎ভৈরব নদতীরের ৬নং ঘাট এলাকায় কেসিসি নির্মিত পার্ক ও বায়তুন নাজাত জামে মসজিদের পাশের ফাঁকা জায়গায় ২০২১ সালে একবার মার্কেট তৈরি হলেও শেখ সোহেলের হস্তক্ষেপে তা ভেঙে দেওয়া হয়। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর ফের সেখানে ১৬টি টিনের ঘর নির্মাণ করা হয়। ঘরগুলো বর্তমানে ফাঁকা থাকলেও সেগুলো বিক্রির জন্য তদবির চলছে।

‎‘ডাক্তার বাড়ি’ ভেঙে রাতারাতি সেখানে ১৪টি দোকান নির্মাণ করা হয়। এজন্য রেলওয়ে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরও ভেঙে নতুন করে সরিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি দোকান ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকায় বিক্রি হতে পারে।

‎বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাবিবুল্লাহ বলেন, “কারা ভেঙেছে জানি না। আমরা থানায় অভিযোগ করেছি। রেলওয়ের ফিল্ড কানুনগো মো. সহিদুজ্জামান স্বীকার করেন, “ডাক্তার বাড়ি ও পার্কের পাশে অবৈধভাবে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো উচ্ছেদের জন্য নোটিশ দেওয়া হবে।” তবে ঘুষ-দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

‎১৯৯৫ সালে এরশাদ শিকদার রেলের জমি দখল করে ‘সাদ মনি মার্কেট’ নির্মাণ করেছিলেন। পরে প্রশাসন তা ভেঙে দেয়। কিন্তু ২৩ বছর পর সেই জমিতেই আবার নতুন মার্কেট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জমিটি বিএনপি নেতাদের নামে ইজারা দেখিয়ে দোকান নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে।

‎অন্যদিকে, পুরাতন রেলস্টেশনের সামনে সেনাবাহিনীর মালামাল নামানোর জায়গায় ১২টি দোকান গড়ে উঠেছে। প্রতিটি দোকানের মাসিক ভাড়া ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হলেও রেলওয়ে কোনো রাজস্ব পাচ্ছে না।

‎মামুর আস্তানার পাশে প্রায় ১০ বিঘা জমিতে মেলা বসিয়ে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। রেলওয়ে কলোনীর ভেতরে একাধিক পুকুর দখল করে মাছ চাষ চলছে। স্টেশন রোডে রেলওয়ের গাড়ি চালকের ভবন ভেঙে দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করা হয়েছে।

‎অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিক প্রভাব ও ঘুষের কারণে এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। রেল কর্মকর্তারা দায় এড়িয়ে বলছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক জায়গায় বাঁধা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা দাবি করেছেন, খুব শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে।

মন্তব্য করুন