২৯শে এপ্রিল, ২০২৫

শিশু অধিকার লঙ্ঘন: বাংলাদেশে বাড়ছে বাল্যবিবাহের প্রবণতা

শিশু অধিকার লঙ্ঘন: বাংলাদেশে বাড়ছে বাল্যবিবাহের প্রবণতা
ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে শিশু অধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহের হার ক্রমবর্ধমান ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে বাল্যবিবাহের হার ৫২ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দারিদ্র্য, শিক্ষা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, এবং সামাজিক রীতিনীতির কারণে বাল্যবিবাহের হার বাড়ছে।

এ বছরের জুন মাসে প্রকাশিত ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আরও বেশি সংখ্যক পরিবার অর্থনৈতিক চাপে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় বাল্যবিবাহের ঘটনা অনেকটাই বেড়েছে। ইউনিসেফ বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, “অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে অনেক পরিবার মেয়েদেরকে একটি ‘বড় বোঝা’ হিসেবে দেখে। ফলে, তারা তাদের দ্রুত বিয়ে দিয়ে দেয়।”

বাল্যবিবাহের কারণে স্কুলছুটের হারও বেড়েছে। জাতীয় শিক্ষা পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০২৩ সালে ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের মধ্যে স্কুল ছাড়ার হার ৩৫ শতাংশের বেশি। অনেক মেয়ে বিয়ের পরে আর স্কুলে ফিরতে পারে না, যা ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান এবং আর্থিক স্বাধীনতায় বড় প্রভাব ফেলে।

বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাল্যবিবাহ শূন্যে নামানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হলেও, বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে সচেতনতার অভাব এবং আইন প্রয়োগের দুর্বলতা এই সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করছে। নারী অধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে কেবলমাত্র আইন প্রয়োগ যথেষ্ট নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে পরিবারগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

বাংলাদেশের প্রধান নারী অধিকার সংগঠন “নারীর জন্য ন্যায়বিচার” এর নির্বাহী পরিচালক তানিয়া রহমান বলেন, “আমরা যদি শুধু আইন দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে চাই, তাহলে সেটা দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হবে না। দরকার শিক্ষা এবং সচেতনতা, যা পরিবার ও সমাজের মনোভাব পরিবর্তন করতে পারবে।”

অন্যদিকে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া ক্রমশ বাড়ছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি, সামাজিক সহায়তা প্রদান এবং শিশুদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাল্যবিবাহের হার কমানো সম্ভব।


সংশ্লিষ্ট তথ্য:

  • বাংলাদেশে বর্তমানে বাল্যবিবাহের হার: ৫২%
  • বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ: আইন প্রণয়ন, সচেতনতামূলক কার্যক্রম
  • বাল্যবিবাহের নেতিবাচক প্রভাব: শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়া, কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যঝুঁকি

মন্তব্য করুন