৩রা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

সুদের চাপে জীবন অতিষ্ঠ

মহম্মদপুরে সুদেকারবারির সামনেই যুবকের বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা

মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি

মাগুরা মহম্মদপুর উপজেলার ঝামা মহেশপুর এলাকায় সুদের চাপ সইতে না পেরে সুদে কারবারির সামনেই ইয়াসিন (৩০) নামে এক যুবক বিষপান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বুধবার সন্ধ্যায় তাকে গুরুতর অবস্থায় মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ্য সুমন ঝামা মহেশপুর এলাকার আব্দুল গনি মোল্লার ছেলে।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ইয়াসিন ওই এলাকার আছাদুজ্জামান নুর নামের এক ব্যাক্তির কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা সুদে নেন ২০২২ সালে। সাপ্তাহিক কিস্তি আকারে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার টাকা করে সুদ প্রদান করে। এভাবে অন্তত ৪০ সপ্তাহ সুদের টাকা প্রদান করার পর ইয়াসিন সুদের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। বিষয়টি ইয়াসিনের বাবা জানার পরে স্থানীয় মোক্তার নামে এক ব্যাক্তির মাধ্যমে আসাদুজ্জামান নুরকে আসল টাকা পরিশোধ করে দেন। লেনদেন শেষ করার পরেও টাকার জন্য প্রায়ই ইয়াসিনকে চাপ দিতে থাকেন আছাদ। এরপর মসজিদের কাজ করার কথা বলে ইয়াসিনের মাধ্যমে তার শশুরবাড়ি এলাকা থেকে ইট নেন আসাদ। ইটের টাকা চাইতে গেলে আসাদ ইয়াসিনকে বলে তোমার কাছে টাকা পাবো সেটি আগে পরিশোধ করো। এ বিষয় নিয়ে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য হয়। পরে ইয়াসিন আসাদের নিকট টাকা চেয়ে না পাওয়ায় উল্টে সুদের টাকা ফের দাবী করায় ঘটনারদিন বুধবার সন্ধ্যায় সুদে কারবারী আসাদের সামনেই ঝামা বাজারে ইয়াসিন বিষপান করে আত্বহত্যার চেষ্টা করে। এ সময় স্থানীয়রা তাকে অসুস্থ্য অবস্থায় চিকিৎসার জন্য মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে যায়।
সরেজমিনে ঝামা এলাকায় গিয়ে একাধিক লোকজনের নিকট থেকে খোজ খবর নিয়ে জানা যায়, ঝামা মহেশপুর এলাকার হাজী মৃত শমসের মোল্যার ছেলে আছাদুজ্জামান নুর দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় চড়া সুদে টাকা দিয়ে থাকেন। প্রতি সপ্তাহে গ্রাহকদের নিকট থেকে সুদের কিস্তির টাকা আদায় করেন আছাদ নিজেই। সুদের টাকার চাপ সইতে না পেরে কেউ-কেউ এলাকা থেকে ব্যাবসা বানিজ্য ছেড়ে পালিয়েও গেছেন।
স্থানীয় ওয়েল্ডিং ব্যবসায়ী শরাফত বিশ্বাস, আব্দুল্লাহ, স্থানীয় চা বিক্রেতা জাহিদুল ইসলাম বলেন, আছাদ বিভিন্ন লোকজনকে সুদে টাকা পয়সা দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। ঝামা বাজারের প্রতিষ্ঠিত জুতা-স্যান্ডেল ব্যবসায়ী মো: মিরাজ হোসেন নামে এক ব্যাক্তি আসাদের নিকট সুদে টাকা নিয়ে ব্যবসা করতেন। সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বোস্ব হারিয়ে ব্যবসা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। তারা আরও জানান আছাদ মিরাজের শোরুমে তালা মারা সহ মোটরসাইকেলটি ছিনিয়ে নেয়।

কসমেটিক্স ব্যাবসায়ী সাদিক হোসেন বলেন ২ লক্ষ টাকা সুদে নিয়ে ৭৫ হাজার টাকা লাভসহ আসল ২ লক্ষ টাকা পরিশোধ করার পরেও তার ৭০ হাজার টাকার একটি চেক এখনও আটকে রেখেছেন আছাদ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজারের আরেক ব্যবসায়ী বলেন, তিনি ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আছাদকে আসলেরও দ্বীগুন টাকা দিয়ে সুদমুক্ত হয়েছেন।
অভিযুক্ত আছাদুজ্জামান নুর তার বিরদ্ধে আনিত আভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, ইয়াসিন আমার নিকট থেকে সুদে কোন টাকা নেয়নি । সে তার ব্যবসায়ের লভ্যাংশের টাকা দেবার কথা বলে টাকা নিয়েছিল । আমি কাউকে কোন সুদে টাকা দেয়নি।

মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. কাজী আবু আহসান বলেন, বর্তমান তিনি আশংকামুক্ত।

মহম্মদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

মন্তব্য করুন