এস এম জীবন, স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর পল্লবীতে আবারও কিশোরদের সংঘাতে প্রাণ গেল এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর। বন্ধু আসিফের ছুরিকাঘাতে মো. রিফাত (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত রিফাত পল্লবীর বেনারসি পল্লী এলাকার বাসিন্দা এবং স্থানীয় জান্নাত একাডেমির এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন।
ঘটনাটি ঘটেছে রোববার (২৩ জুন) রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর মিরপুর ১১ নম্বর সেকশন এলাকায়। ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় রিফাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহতের বাবা মো. শাহিন জানান, “রোববার রাতে এক বান্ধবীকে কেন্দ্র করে বন্ধু আসিফের সঙ্গে রিফাতের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে আসিফ তার পেটে ছুরি মারে এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিহত রিফাত ও অভিযুক্ত আসিফ দীর্ঘদিনের বন্ধু ছিল। সম্প্রতি ‘সাইকা’ নামে এক তরুণীকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দেয়। সেই বিরোধ থেকেই এদিন রাতে দুই বন্ধুর মধ্যে তুমুল বাকবিতণ্ডা হয়, যা একপর্যায়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আসিফ ক্ষিপ্ত হয়ে সঙ্গে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে রিফাতকে আঘাত করে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া বলেন, “রিফাতকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হলে রাতেই তার মৃত্যু হয়। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট থানাকে জানানো হয়েছে।”
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় নেমে আসে চরম শোক ও চাঞ্চল্য। মিরপুর-১১ এর স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “রিফাত ও আসিফ ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। একসঙ্গে বড় হয়েছে তারা। কল্পনাও করিনি এ ধরনের মর্মান্তিক কিছু ঘটতে পারে।”
এ বিষয়ে পল্লবী থানার একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, “ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত আসিফকে আটকের জন্য অভিযান চলছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ব্যক্তিগত সম্পর্কজনিত বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিশোর অপরাধ বাড়ার পেছনে সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক তত্ত্বাবধানের অভাব এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মূল্যবোধ শেখানোর ঘাটতি বড় ভূমিকা রাখছে। সময় থাকতেই এসব সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের উদ্যোগ নিতে হবে।
এদিকে রিফাতের মৃত্যুতে তার পরিবার, সহপাঠী ও এলাকাবাসীর মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। তার সহপাঠীরা দ্রুত হত্যাকারীর গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
