শনিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২১, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
খবরের আলো :
মস্তফা কবির আমতলী(বরগুনা) প্রতিনিধি::বরগুনার তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সম্পাদকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন আরেক আওয়ামীলগ নেতা। নিশানবাড়িয়া ইউপি’র চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ দুলাল ফরাজী শুক্রবার আমতলী প্রেসক্লাবে উপস্থিত হয়ে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক, ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনুর বিরুদ্ধে ঘুষ, চাঁদাবাজি, অনিয়ম, বেআইনী ক্ষমতার অপব্যবহার ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ করেছেন।
লিাখত বক্তব্যে তিনি জানিয়েছেন, বর্তমানে তিনি নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী মোসাঃ মাসুদা আক্তার তালতলীর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে মানুষের সেবা করে আসছেন। তাদের জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়তে থাকলে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে গোপনে ও প্রকাশ্যে শত্রুতা করছে।
গত ২৩/১১/২০১৮ ইং তারিখ নলবুনিয়া শুভ সন্ধ্যা ঝাউবাগানে বরগুনা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জোৎস্না উৎসব অনুষ্ঠান চলাকালে সন্ত্রাসি বাহিনী নিয়ে তৌফিকুজ্জামান তনু ও রেজবি উল কবির জোমাদ্দার হামলা চালিয়ে তাকে মারধোর করে এবং উল্টে মিথ্যে মামলায় ফঁসানোর অপচেষ্টা করে। তারা নগদ দুই লক্ষ টাকা চাঁদাও দাবি করে। দুলাল ফরাজী অভিযোগ করেন, তনু ও রেজবি গংদের ভয়ে তার তালতলী সরকারী ডিগ্রী কলেজে পড়–য়া কন্যা মোসাঃ রাফামনি কলেজে যেতে পারছে না। তাদের কাছে কোন ভদ্র মানুষই নিরাপদ নয়।
তাই আমি সর্বক্ষেত্রে তাদেরকে এড়িয়ে চলি। অতঃপর আমি অনুষ্ঠানে আসা মেহমানদেরকে মেহমানদারি করানোর প্রস্তুতি নেই। ওই সময়ে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার আমাকে বলে, তালই আমি যাই। উত্তরে আমি বলি যে, আপনার সকল লোকজন নিয়ে খাওয়া দাওয়া করে যাবেন। ঠিক ঐ সময়ে ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদকমোঃ তৌফিকুজ্জামান তনুসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ১০/১৫ জন লোক আমাকে বলে যে খুবই ভালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছ, অনুষ্ঠান চালাতে পারবি না। আমি বললাম কেন অনুষ্ঠান চলবে না? ইহার কারন কি? তারা বলে কোন কারন নাই আমরা উপজেলা আওয়ামিলীগ এর সভাপতি ও সেক্রেটারী, অনুষ্ঠান সম্পর্কে আমাদেরকে অবহিত কর নাই এবং মাইকে আমাদের নাম কেন প্রচার হয় নাই? তোকে এতবড় সাহস কে দিল, তুই খুব বেড়ে গেছ, সামনে উপজেলা পরিষদের নির্বাচন করে চেয়ারম্যান হবা? তার আগে শালা তোকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেব। ভবিষ্যতে তোর নাম নিশানা এই উপজেলায় রাখবো না। এই বলে আমাকে হুমকি দেয়। আমি বললাম অনুষ্ঠান জেলা প্রশাসক মহোদয়ের ।
আমি এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে জেলা প্রশাসনের নির্দেশক্রমে দায়িত্ব পালন করি । ইহার জবাবে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং । চাঁদা না দিলে অনুষ্ঠানের মঞ্চে তারা হামলা করে অনুষ্ঠান পন্ড করে দিবে বলে হুমকি দেয়। আমি ইহার প্রতিবাদ করিলে উক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমাকে খুনের উদ্দেশ্যে মারধর করে। আমি প্রানে বাচার জন্য ডাক-চিৎকার করিলে কতিপয় স্বাক্ষীরা আসিয়া আমাকে উদ্ধার করিয়া নলবুনিয়া আশ্রয়ন কেন্দ্রের টিনসেড বিল্ডিং এ নিয়া আটকাইয়া নিরাপদ স্থানে রাখে । আমাকে খুন করার জন্য বিল্ডিং এর দরজা বার বার লাথি দিয়ে ভাঙ্গার চেষ্টা করে। বিল্ডিং এর জানালা ও দরজার কপাট ভাংতে পারলে আমাকে খুন করে ফেলতো । এইভাবে তৌফিকুজ্জামান তনু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী অত্র এলাকায় ক্ষমতার দাপট দেখাইয়া বে আইনী প্রান-নাশক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হইয়া সন্ত্রাসীদের মহড়া সৃষ্টি করিয়া এলাকার নিরীহ মানুষকে খুনের হুমকি দিয়া ভয়ভীতি প্রদর্শন করিয়া নিরীহ মানুষকে অত্র স্থান থেকে তাড়াইয়া দেয়। এবং অত্র এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। বিষয়টি তালতলী পুলিশ প্রশাসন অবগত হইয়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেয়ার জন্য এবং আমাকে শান্তিপুর্ন ভাবে উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা করিলে উক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীর তান্ডবেপুলিশ প্রশাসন অসহায় হয়ে পরে। এর পরে প্রায় ২ ঘন্টা পরে পুলিশ প্রশাসনের চেষ্টায় উক্ত সন্ত্রাসীদের কবল হইতে আমাকে উদ্ধার করে তালতলী থানায় নিরাপদে নিয়ে যায়। কিন্তু তৌফিকুজ্জামান তনু মিথ্যা নাটক সাজাইয়া আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। তবে তাদের এহেন সন্ত্রাসী তিনি আরও অভিযোগ করেন, তার নির্বাচিত এলাকায় যে কোন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজেই বেআইনী ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তারা বাঁধা সৃষ্টি করে চাঁদা দাবী করে। তিনি জানিয়েছেন, বড় অংকুজানপাড়া ৩০৭ মেগাওয়াট পাওয়ারপ্লান্ট স্থাপনের কাজ এগিয়ে চলছে। তনু ও রেজবি উক্ত পাওয়ারপ্লান্ট এর প্রতিনিধিদের কাছে নগদ ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবী করে কাজ বন্ধ করে দেয়। পরে কোম্পানিটি উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনুকে ৫০,০০,০০০/- চাঁদা দিতে বাধ্য হয় এবং বাকি ৫০ লক্ষ টাকার জন্য তার (দুলাল ফরাজী) সামনে প্রকল্প পরিচালককে গালিগালাজ করে আর এই বলে হুমকি দেয় যে, “বাকি টাকা না দিলে তোকে পায়রার পানিতে চুবিয়ে মারবো।”
দুলাল ফরাজী জানান, “আমাকে অত্র এলাকার চেয়ারম্যান হিসেবে পাওয়ারপ্লান্ট এর কর্তৃপক্ষ মোখিকভাবে দেখাশুনা করার জন্য অনুরোধ করিলে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে মাঝে মধ্যে দেখাশুনা করতে গেলে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার ও তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারন সম্পাদক মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনীরা আমাকে খুনের উদ্দেশ্যে সর্বসময় আমার উপর হামলা করে। পাওয়ারপ্লান্ট এর কর্মকর্তাবৃন্দের আমন্ত্রনে গত ১৩/০৩/১৯ তারিখে উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু এবং আমি পাওয়ারপ্লান্টে গেলে মোঃ রেজবিউল কবির জোমাদ্দার ও মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু উপস্থিত হইয়া তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা খুনের উদ্দেশ্যে আমাদেরকে জিম্মি করলে তালতলী থানার ওসি আমদেরকে উদ্ধার করে অতঃপর তাদের ষরযন্ত্র ব্যর্থ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আমার বিরুদ্ধে জেলেদের টাকা আত্মসাধের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে পিস্তল ঠেকানোর বানোয়াট অভিযোগ আনে।
উক্ত সন্ত্রাসীদের কর্মকান্ডে আমি ও আমার স্ত্রীর নির্বাচিত এলাকায় আমার পরিবারের লোকজন স্বাভাবিকভাবে নিরাপদে চলাচল করতে পারছি না। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন উক্ত সন্ত্রাসী বাহিনীর কর্মকান্ডে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেছি। উক্ত সন্ত্রাসীরা আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ সাইট ফেজবুকে এবং প্রিন্ট মিডিয়ায় মিথ্যা অভিযোগ প্রচার করে আমাকে হয়রানী করতেছে। তারা যে কোন সময়ে মিথ্যা নাটক সাজাইয়া আমার, আমার পরিবার ও দলীয় লোকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানী করবে বলে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। তাদের আচরনে বর্বরতার যুগ হার মানায়। আমার ভবিষ্যৎ রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য উক্ত সন্ত্রাসী বাহিনী বিভিন্নভাবে নোংরা ষরযন্ত্রে লিপ্ত।”
সংবাদ সম্মেলনে তার সাথে আরও ছিলেন,.নিশানবাড়ীয়া ইউপির বাসিন্ধা ওষুধ ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম।
দুলাল ফরাজী জানান, নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে প্রশান ও আইনরক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তিনি সহায়তা চেয়েছেন। এ ব্যাপারে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি রেজবিউল কবির জোমাদ্দার তার এবং সাধারন সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান তনুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বিকার বলেন পাওয়ার প্লান্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক জেলেদের জন্য দেয়া ৭ লাখ টাকা দুলাল ফরাজী আত্মসাৎ করেছেন । সেই টাকা উদ্ধারের জন্য আমরা ১৩ মার্চ ওখানে গিয়েছিলাম এ ছাড়া যে অভিযোগ দিয়েছে তার কোনো ভিত্তি নাই।
তালতলী থানার অফিসার ইনচার্জ পুলকচন্দ্র রায় বলেন চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী সুনির্দ্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।