খবরের আলো :
দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা) প্রতিনিধিঃঢাকার দোহার উপজেলায় দোহার পৌরসভার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত কড় আদায়ের অভিযোগ এনে বিক্ষোভ করে আংশিক পৌরবাসী। তাদের অভিযোগ পৌর কর্তৃপক্ষ অনৈতিক ভাবে প্রতি বছর কোনোরুপ উন্নয়ন না করেই বিভিন্ন ধাপে অতিরিক্ত কড় আদায় করছে যার প্রদান ক্ষমতা পৌরবাসীর আওতার বাইরে। এমনি সব অভিযোগ নিয়ে পৌরসভার ১,২ ও ৩ নং ওয়ার্ড পৌরবাসীরা বিক্ষোভে ফেটে পরে। বুধবার বেলা ১১ টায় প্রায় ৪ শতাধিক লোক একত্র হয়ে পৌরসভা কার্যালয়ের নিচে এসে বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগানে পৌর প্রকৌশলী মশিউর রহমানের বহিস্কারের দাবী করে। বিক্ষোভের এক সময় প্রকৌশলী মশিউর রহমান নীজ কার্যালয় থেকে নিচে নেমে আসে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতার প্রায় ১৫ জনের একটি প্রতিনিধি দল পৌরসভা অডিটোরিয়াম কক্ষে গিয়ে পৌর মেয়র আঃ রহিম মিয়া, সচিব নাছরিন আক্তার ও প্রকৌশলী মশিউর রহমানের সাথে বৈঠক করে। প্রায় ২০ মি. সময় এ বৈঠকে তাদের প্রতিনিধি দল তাদের দাবী-দাওয়া তুলে ধরে। বিশেষ করে অতিশীঘ্রই পৌরসভার সকল উন্নয়মূলক কাজ সম্পন্ন ও পৌর কড় কমিয়ে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের সক্ষমতা প্রদানের দাবী জানায় তারা। পরে তাদের সকল অভিযোগ ও দাবী-দাওয়া শুনে পৌরসভা মেয়র আঃ রহিম মিয়া বলেন, আমার পৌরসভা চালানোর জন্য সরকার থেকে পর্যাপ্ত অর্থ পাইনা! যার ফলে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীর মাসিক বেতনাদী পৌরসভাকেই বহন করতে হয়। পৌর এলাকার রাস্তায় ড্রেন, রাতে চলাচলের জন্য পল্লী বিদ্যুৎ থেকে ল্যাম্পপোস্ট, বাজার পরিস্কার, রাস্তাঘাট সহ বিভিন্ন দিকে জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র পৌরবাসীর একটু শান্তি ও জান-মালের নিরাপওার কথা ভেবে। তাই যেহেতু সরকার থেকে আমরা তেমন কিছুই পাইনা সুতরাং আপনাদের টাকায় আপনাদেরই সেবা করি। তবে আমি আপনাদের সকল দাবী মেনে নিলাম, অতিশীঘ্রই আপনাদের সকল দাবীর প্রতিফলন ঘটবে। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের লোকজন পৌর মেয়রের হাতে একটি স্বারকলীপি তুলে দেন। যেখানে স্বারকলীপিতে ১১ টি অনুচ্ছেদের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌরসভা গঠনের এই ১৯ বছর চলমান রয়েছে। যেখানে দোহার পৌরসভা প্রথম শ্রেণীর স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু সে অনুযায়ি পৌরবাসীর কোনোরুপ আশার বাস্ত বায়ন ঘটেনি। উল্লেখ্য, স্বারকলীপির ৫ম অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে, ১০-১২ বছর যাবত পৌরসভা কর্যালয়ে বিশাল আকৃতির একটি পানির ট্যাংক রয়েছে যা থেকে দেখে পৌরবাসীর মনে করেছিলো তাদের পানির দুঃখ ঘুচবে। কিন্তু পৌরবাসী সেই সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে কড়ের অর্থ বাড়ানোর যৌক্তিকতা মনে করে না। আবার স্বারকলীপির ৮ নং অনুচ্ছেদে দেখাযায়, পৌরসভা কর্তৃক পৌরবাসীর পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কোথাও ২/১ টি পানি নিষ্কাশনের ড্রেন থাকলেও ময়লা-আবর্জনা পরে তা ভরে রয়েছে। ফলে মশা-মাছি আর দুর্গন্ধে বসবাসের অনুপযোগী হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ কোনোরুপ পদক্ষেপ গ্রহন করে বলে স্বারকলীপিতে অভিযোগ করা হয়। যার ফলে কড়ের অর্থ বাড়ানোর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তারা। এ ছাড়াও বিভিন্ন খাতে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ তুলে ধরে অনতিবিলম্বে পৌর কড় কমিয়ে আনার দাবী জানানো হয় স্বারকলীপিতে। এ দিকে স্বারকলীপি প্রদানের আগে বৈঠকের প্রায় ১০ মিঃ এর সময় পৌর কার্যালয়ের নীচ তলায় হঠাৎ করে অতিউৎসাহী কিছু লোকজন ভাংচুর চালায়। এতে করে নিচ তলার অফিস কক্ষের জানালার কাচ সহ কাচের তৈরি নোটিশ বোর্ড ও সকল ফুলের গাছ ও টব ভেঙ্গে ফেলে। বৈঠক শেষে প্রতিনিধি দলের লোক তাদের দাবী পৌরসভা মেয়র মেনে নিয়েছেন এবং তা পালন করা হবে যদি তা পালন করা না হয় তবে পুনরায় তারা পৌরসভা কার্যালয়ে এসে বিক্ষোভ করবে বলে হুশিয়ারী দিয়ে চলে যেতে থাকে। ঘটনার পালাক্রমে পথিমধ্যে পৌরসভার বাসিন্দা মুক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে তাড়া করে জনগন। এ সময় তিনি পৌরর কার্যালয়ের ২য় তলার সিড়ির গেইটে তালা দিয়ে পৌর মেয়রের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। বিক্ষুব্ধ জনতারা জানায়, মুক্তার হোসেন তাদের বিরুদ্ধে কটুক্তি করায় তারা তাকে মারতে তাড়া করেছে। কিন্তু মুক্তার হোসেন বলেন, তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ সময় পৌরসভার নিচ তলায় আরো কিছু কক্ষের জানালার কাচ ভেঙ্গে ফেলে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে দোহার থানা পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এলে উপস্থিত সকল বিক্ষুব্ধ জনতা তাদের গুটিয়ে নিয়ে স্থান ত্যাগ করে। পরে দোহার থানার সেকেন্ড অফিসার সৌমেন মৈত্র পৌরসভা মেয়র, সচিব ও প্রকৌশলীর সাথে ঘটনার বিস্তারিত সম্পর্কে অবগত হন। এ বিষয়ে তিনি জানান, পৌরসভার বিরুদ্ধে পৌরবাসীর অভিযোগ থাকতেই পারে। সে অনুযায়ী স্ববারকলীপি জমা দিয়ে তারা শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রেখে যেতে পারতো। কিন্তু তা না করে একটি প্রাতৃষ্ঠানিক ভবনে এসে ভাংচুর করে অন্যায় করেছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের খুজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।