শনিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২১, ১১:০০ অপরাহ্ন
খবরের আলো :
মহিউদ্দিন আহমেদ ,শ্রীপুর (গাজীপুর )প্রতিনিধি: ঢাকা-ময়মনসিংহ সহাসড়কের গাজীপুর অংশে ফের অবৈধ দলখদারীদের দৌড়াত্ম শুরু হয়েছে। এর আগে গাজীপুর জেলা পুলিশের উদ্যোগে মহাসড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত হলেও এর কোন সুফল মিলেনি।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, জয়দেবপুর থেকে ময়মনসিংহ মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে গাজীপুর অংশে রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। মহাসড়কের গুরুত্ববিবেচনা করে বর্তমান সরকার বিগত ২০১৬ সালে জনদুর্ভোগ লাঘবে সড়কটিকে চার লেনে উন্নীত করেন। কিন্তু শিল্প এলাকা সমৃদ্ধ গাজীপুরে জনসংখ্যার আধিক্য থাকায় স্থানীয়দের উদ্যোগে গত কয়েকবছর ধরেই মহাসড়কের জৈনা বাজার, নয়নপুর বাজার, এমসি বাজার ও মাওনা চৌরাস্তা, গড়গড়িয়া মাষ্টারবাড়ি, ভবানীপুর, বাঘেরবাজার সড়কের দুপাশ দখল করে বাজার বসছে। এতে চার লেনের সুফল বঞ্চিত হয়ে জনদুর্ভোগ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এছাড়াও স্থানীয় বাজারের ফুটপাতগুলোও অবৈধ দখলে থাকায় বাড়ছে পথচারীদের দুর্ভোগও।
মহাসড়কের বাঘের বাজারে কথা হয় আলম এশিয়া পরিবহনের চালক এনামুল হকের সাথে। তিনি জানান, মহাসড়ক প্রশস্ত হয়েছে তবে এর সুফল আমরা পাচ্ছি না সড়কের বিশৃঙ্খলার কারনে। মহাসড়কের উপর বিভিন্ন স্থানে বাজার থাকায় এখন নির্বিঘ্নে গাড়ী চালানো যায় না। যানজটের দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের।
তেলিহাটি গ্রামের স্কুল শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, জৈনা বাজারে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশ দখল করে বাজার বসান স্থানীয় ইজারাদার। এতে মহাসড়কের চার লেন এখন দু লেনে পরিণত হয়েছে। আর ফুটপাতগুলোর তো অস্তিত্বই নেই। ঝুঁকি নিয়েই আমরা চলাচল করে থাকি। প্রশাসনের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।
কেওয়া পশ্চিম খন্ড এলাকার তরুণ সমাজকর্মী জামাল উদ্দিন বলেন, গাজীপুরের জনগুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান মাওনা চৌরাস্তা। এখানে সরকার নির্মাণ করে দিয়েছেন একটি উড়াল সড়ক, কিন্তু দু:খের বিষয় এই উড়াল সড়ক ঘিরে মহাসড়কের উপর হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় প্রতিদিন বসে ভাসমান দোকান পাট। এছাড়াও চৌরাস্তার সকল ফুটপাতগুলোর উপরেও অবৈধ দোকানপাট বসে। এর ফলে স্থানীয়দের যে দুর্ভোগ পোহাতে হয় তা চোখে না দেখলে কেউ বিশ্বাস করবে না।
মাওনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন খালিদ জানান, শুধু মাত্র মহাসড়কে দখলদারীদের দৌড়াত্ম থাকায় কোনভাবেই সাধারণ মানুষ এর সুফল পাচ্ছে না। মহাসড়কে অবৈধ দখলদারদের দৈাড়াত্ম, অবৈধ যান দাঁড়িয়ে থাকা, ভুল পথে গাড়ী চালানো এখন যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এতে আমাদের চার মিনিটের পথ যেতে ত্রিশ মিনিট লাগে। সড়কের নিরাপত্তা দেয়া যাদের কাজ তারাই এখন সড়কে থাকে না।
মাওনা চৌরাস্তার বনিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আশরাফুল ইসলাম রতন জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রীণ ও ক্লিন গাজীপুরের একটি প্রতিশ্রুতি আমাদের দেয়া হয়েছিল। আমরা সে সময় আশায় বুকও বেধে ছিলাম। কিন্তু এর ফল এখনও আমরা পাইনি। সড়কের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে পুনরায় উদ্যোগ নিলে সাধারণ মানুষ অনেকটা নিরাপত্তা খুঁজে পাবে সাথে কমবে জনদুর্ভোগও।
জৈনা বাজারের ইজারাদার আবুল হাসেম জানান, আমাদের এসব বাজার অবৈধ তা বলা যাবে না কারন আমরা সরকার থেকে বাজার এক বছর মেয়াদী ইজারা নিয়েছি। তবে মহাসড়কে বাজার না বসানোর বিষয়ে আমাদের নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। মাঝে মধ্যে বাজার তার নির্দ্দিষ্ট সীমানা পেড়িয়ে মহাসড়কে বসে পরে, তখন আমাদের কিছুই আর করার থাকে না।
এ বিষয়ে গাজীপুর হাইওয়ে পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়কের উপর বাজার নিরাপত্তার সাথে দুর্ভোগ সৃষ্টিরও একটা কারন। আমরা কয়েকবার এসব বাজার সরিয়ে নিতে ইজারাদারদের নোটিশ দিয়েছি। স্থানীয় প্রশাসন এসব বাজার ইজারা দেয়ার কারনে ইজারাদাররা ইজারার বিষয়টি বারবার সামনে নিয়ে আসেন। তবে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে মহাসড়কের উপর বাজারগুলোর ইজারা বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে ইতিমধ্যেই আবেদন জানানো হয়েছে।
মহাসড়কের উপর এবং ফুটপাতে কোন ধরনের বাজার বা অবৈধ স্থাপনা থাকতে পারবে না বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের পুলিশ সুপার(এসপি) শামসুন্নাহার। তিনি আরো জানান, মহাসড়ক নিরাপদ করতে আবারও জেলা পুলিশ উদ্যোগ গ্রহন করবে। খুব দ্রুতই মহাসড়ক দখলমুক্ত করা হবে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, মহাসড়কের উপর বাজার বসানোর যেমন কোন সুযোগ নেই। তেমন ইজারাও দেয়া যায় না। অনুমোদিত হাট ছাড়া যদি কেউ সড়ক জনপথের জায়গায় বাজারের ইজারা দেয় বা কেউ ইজারা নিয়ে বাজার বসায় তাহলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।