বুধবার, ০৩ মার্চ ২০২১, ১১:২২ অপরাহ্ন
খবরের আলো :
শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ: চোখের জলে স্বপ্ন ভাসিয়ে নদীর জলে আহার খোঁজে সখিনা খাতুন। ৩৯ বছর ধরে এভাবে সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির জলে জাল টেনে জীবীকা নির্বাহ করছেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর পর কপাল ভাঙলেও মন ভাঙেনি তার। ওপারে ভারত, এপারে বাংলাদেশ। মাঝখানে ইছামতি। ওপারের ঊলুর ধ্বনী এপারে আসে। এপারের আযানের ধ্বনী ওপারে যায়। ওপারের পাখি এপারে, এপারের পাখি ওপারে যায়। একই নদীর এ কূলের মাছ যায় ও কূলে আবার ও কূলের মাছ আসে এ কূলে। কিন্তু মানুষ ইচ্ছা করলেই এভাবে একূল ওকূল করতে পারে না। এভাবে ভাবে আর নিবিষ্টমনে ঠেলা জাল ঠেলে যায় সখিনা। বয়স তার ৫০ এর কাছাকাছি। সেই ১০/১১ বছর বয়স থেকে শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। জীবনের সাথে হার না মানা অবিরাম সে সংগ্রাম।
ছখিনা খাতুন দেবহাটা উপজেলার দক্ষিণনাংলা গ্রামের মৃত আকবর আলীর স্ত্রী। ছখিনা খাতুন জানান, ছোটবেলা থেকে নদীতে মাছ ধরেই তার জীবন অতিবাহিত করছে। এই মাছ ধরেই চলে তার সংসার। এমনকি এই আয় দিয়েই তার একমাত্র ছেলের লেখাপড়ার খরচসহ সার্বিক ব্যয় নির্বাহ করছে। ছখিনা খাতুন জানান, তিনি অত্যন্ত গরীব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। অভাবের সংসারে বাবা মায়ের অর্থনৈতিক দৈন্যদশার কারণে বেশীদুর পড়াশুনা করা সম্ভব হয়নি। যার কারণে তিনি নদীতে জাল টেনে রেণুপোনা ধরা শুরু করেন। তিনি জানান, রেণুপোনা ধরে তিনি দিনে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা আয় করেন। ঐ রেণুপোনাগুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীরা কিনে নিয়ে বিভিন্ন মৎস্য ঘেরে বিক্রয় করেন। সেখান থেকেই তার নদীর সাথেই জীবনের মিতালি। পরে তার পিতা মাতা আকবর আলীর সাথে তার বিবাহ দেন। তার বৈবাহিক জীবনে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিন্তু তিনি জাল টেনে মাছ ধরা বন্ধ করেননি। কয়েক বছর পরে তার স্বামী মারা যান। আবারো তার জীবনে দুর্বিসহ অবস্থা নেমে আসে। সংসার ও ছেলের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেতে হয়। কিন্তু নদীতে মাছ ধরেই তার কোনরকমে সংসারটি চলতে থাকে। জীবনের প্রয়োজনে তিনি আর পিছু ফিরে তাকাননি। নদীর সাথের তার জীবনের গভীর সম্পর্ক হয়ে যায়। তিনি ভোর বেলা থেকে দুপুর পর্যন্ত আর কোন কোন সময় দুপুরবেলা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে জাল টেনে মাছ ধরেন। ছকিনা জানান, শুধু তিনিই নন, এই নদীতে মাছ ধরে তার এলাকার এবং আশেপাশের এলাকার অনেক নারী ও পুরুষ। এই নদীর সাথের মিশে আছে তাদের ভাল মন্দ, সুখ দুঃখ, মান-অভিমান। সংসার ও দৈনন্দিন কাজ কর্ম শেষে যখন বিশ্রাম নেয় তখন একটি গানের সুর মনে পড়ে তার। ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু।