মঙ্গলবার, ০২ মার্চ ২০২১, ০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
খবরের আলো :
শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ: সৌদি আরব হাসপাতালে মোটা অংকের বেতনে সেবিকার কাজের নামে পতিতালয়ে বিক্রি হওয়া সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাগুরা গ্রামের এক নারী (২০) অবশেষে দেশে ফিরেছেন। বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে বুধবার তিনি ঢাকার শাহাজালাল বিমানবন্দরে পৌছান। রাতে তিনি বাবা,খালু ও বোনের সঙ্গে নিজ বাড়িতে আসেন।
বাড়িতে ফিরে সৌদি আরব অতিবাহিত করা দীর্ঘ সাড়ে আট মাসের কাহিনী বর্ণনা দিতে যেয়ে ওই নারী জানান, তিনি সাতক্ষীরার সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস্ মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সপ্তম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনার পর অভাবের কারণে আর পড়তে পারেননি। হাসপাতালের সেবিকা হিসাবে মাসিক ৪০ হাজার টাকা বেতনে কাজ করার জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তাদের প্রতিবেশি নাছিমা ও খুলনার টুটপাড়ার আল আমিন ওরফ সোহাগ বাবু তাকে সৌদি আরব পাঠায়। তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে পাঁসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করেন নাছিমা ও সোহাগ বাবু। সৌদি বিমানবন্দরে নামার পরপরেই তাকে ফরহাদ দালালের মাধ্যমে সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’ এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’ এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। সেখান নিয়ে যাওয়ার পর তাকে একটি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রাখা হয়। প্রথম দিন থেকেই তাকে বহু পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিন মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়া রেখে নির্যাতন চালানো হয়। আপত্তি করায় ইতিমধ্যেই তার দু’স্তন, উরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ডান চোখটি ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত ২৮ ও ২৯ আগষ্ট দু’ পাচারকারি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর গ্রেফতার হওয়ায় তার উপর নির্যাতন আরো বেড়ে যায়। এখানে শুধু সে একা নয়, বাংলাদশী আরো বেশ কয়েকজন নারীকে সেখানে এনে একইভাব নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে একজন মারাও গেছেন। কথা বলার একপর্যায়ে ওই নারী তার দেহের উপর নির্যাতনের পাশবিক দগদগে ক্ষত চিহ্নযুক্ত অত্যাচারর দৃশ্য দেখান। আর কোন নারী যাতে এভাবে নারকীয় নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য তিনি নাছিমা ও সোহাগ বাবুর দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান।
নির্যাতিতা ওই নারীর বাবা জানান, বরিশাল র্যাব -৮ ও খুলনা র্যাব -৬ এর কোম্পানী কমাণ্ডার এর সহযোগিতায় দু’পাচারকারিকে আটকের কথা তুলে ধরে বলেন, সোহাগ বাবুর সঠিক ঠিকানা যাচাই ও কোন এজেন্সীর মাধ্যমে মেয়েকে সৌদিতে পাঠানা হয়েছে তা জানার জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপ-পরিদর্শক অনুপ কুমার দাস তদন্তকালে নিশ্চিত করতে পারেননি। তবে মামলার বর্তমান তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি (অর্গান) উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম, রাইটস যশোর এর নির্বাহী পরিচালক বিনয় কষ্ণ মল্লিক, মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ’র ঐকান্তিক চেষ্টায় মেয়েকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন।এ বিষয়ে
জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা সিআইডি’র উপ-পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহষ্পতিবার সকালে ওই নারীকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি করানো হয়েছে।