বৃহস্পতিবার, ০৪ মার্চ ২০২১, ০২:১১ পূর্বাহ্ন
খবরের আলো :
শ্রীপুর প্রতিনিধিঃগাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নিরাপত্তায় নিয়োজিত মাওনা হাইওয়ে থানা পুলিশ মেতে উঠেছে এবার “অবৈধ যান” বানিজ্যে। নানা অজুহাতে মহাসড়ক ও এর আশপাশ এলাকা থেকে প্রতিদিন অর্ধশত যান জব্দ করেন তারা। পরে সারা রাত ব্যাপী দরদাম করে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন । এমন অভিযোগ নিয়ে ওসির প্রত্যাহার চেয়ে আজ বুধবার সকালে মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তায় বিক্ষোভ করেছে পরিবহন চালকরা।পরিবহন চালকদের ভাষ্যমতে,সরকার মহাসড়কে তিনচাকার যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করায় যেন পোয়া বারো হাইওয়ে পুলিশের। তারা এখন মহাসড়কের নিরাপত্তার পরিবর্তে বানিজ্যে জড়িয়ে গেছে। এধরনের বানিজ্য বিভিন্ন অটোরিক্সা, ব্যাটারী চালিতযান,সিএনজিঅটোরিক্সা,মোটরসাইকেল,যানবাহন ষ্ট্যান্ড,গাড়ীর কাগজপত্রে ক্রুটি থাকাকে ঘিরে। এছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে কাগজপত্রে ক্রুটি থাকা বিভিন্ন পরিবহন ও ইটা বালি পরিবহনের গাড়ী থেকে মাসোহারা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে।সকালে বা ভোরে বিভিন্ন সিএনজি ষ্টেশনে জ্বালানী আনতে গেলে পুলিশ গাড়ী আটকিয়ে থানায় নিয়ে যায়। এছাড়াও মহাসড়কের পাশে থাকা বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক থেকেও ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা জব্দ করেন তারা। পরে সন্ধ্যা হলেই হাইওয়ে থানা এলাকায় দালাল চক্রের মাধ্যমে দরদাম করে গাড়ী ছাড়াতে হয়। পুলিশের চাহিদামত টাকা না দিলে দেয়া হয় মামলার হুমকী ও আটক স্লীপ। এছাড়াও সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মহাসড়কের উপর দাড়িয়ে থাকা বিভিন্ন পরিবহন হতে রেকারের ভয় দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেন হাইওয়ে পুলিশ সদস্যরা। গত ৫ মাস পূর্বে হাইওয়ে থানায় নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই যেন পুলিশের নানা ধরনের বানিজ্য ও অপতৎপরতা বেড়েছে। ওসির নেতৃতে, অর্ধশত সোর্স নিয়ে হাইওয়ে সড়কে বেপরোয়া এখন পিএসআই আইয়ুব আলী ,এসআই মারফত ও এসআই শাহজাহান।সিএনজি চালক আক্তার হোসেন জানান,গত ৩ মাস আগে জ্বালানী নিয়ে ফেরার পথে মাওনা চৌরাস্তায় তার গাড়ী আটক করেন পিএসআই আইয়ুব আলী। পরে বিভিন্ন ভাবে অনুনয় বিনয় করলেও তারা গাড়ী ছাড়েননি। কয়েকদিন পর স্ত্রীর কানের দুল সাড়ে আট হাজার টাকায় বিক্রি করে গাড়ী ছাড়িয়ে নেন।মাওনা উত্তরপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিন জানান, মহাসড়কের পাশে এমসি বাজার সংযোগস্থলের ষ্ট্যান্ড থেকে পুলিশের এক সোর্স গিয়ে তার ও সাথে থাকা আরো ৫টি গাড়ীর চাবী থানায় নিয়ে যান। পরে পুলিশের এস আই মারফত আলীকে ১হাজার টাকা করে দিয়ে প্রত্যেকেই গাড়ী ছাড়িয়ে নেন তারা। তিনি আরো বলেন, সরকারী আইন মেনেই তারা মহাসড়কে গাড়ী চালান না। তারপরও টাকার জন্য বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কেও হানা দিয়ে গাড়ী আটক করেন পুলিশ।গড়গড়িয়া মাষ্টার বাড়ীর আসাদ মিয়া জানান,তিনি শ্রীপুর-মাষ্টারবাড়ী আঞ্চলিক সড়কে গাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। গত ৮ ফেব্রুয়ারী মাষ্টারবাড়ী থেকে এক সোর্সের মাধ্যমে তার গাড়ী জব্দ করেন এস আই মারফত আলী। পরে ৬হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি গাড়ী ছাড়িয়ে নেন।অটোরিক্সা চালকদের ভাষ্যমতে,নিম্ন আয়ের এক শ্রেনীর লোকজন মহাসড়কের পাশের বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে গাড়ী চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তারা স্বল্প আয়ের লোকজন। ধার দেনা করে একটি গাড়ী কিনতে খরচ হয় ৮০-৯০হাজার টাকা। হঠাৎ করে বেপরোয় এখন হাইওয়ে পুলিশ। প্রতিনিয়ত আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে গাড়ী জব্দ করে নিয়ে যান। গাড়ী বন্ধ থাকলে ব্যাটারী নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকায় তারা পুলিশের চাহিদা মত টাকা দিয়েই গাড়ী মুক্ত করে নিয়ে আসেন। প্রতিটি তিনচাকার যান ছাড়াতে ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত টাকা গুনতে হয়।কেওয়া গ্রামের আবু বকর সিদ্দিক নামের এক পরিবহন চালক বলেন,কেউ যদি অপরাধ করে তাহলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা, অথচ হাইওয়ে পুলিশ প্রতিটি ঘটনায় সোর্সের সাথে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। তাদেরকে টাকা দিলে বৈধ অবৈধ কিছুই না।স্থানীয়রা জানান,সন্ধ্যা হলেই হাইওয়ে পুলিশের সহযোগিতায় মাওনা চৌরাস্তার উড়াল সড়ক ঘেঁষে বসে হাজারো ভ্রাম্যমান দোকানপাট। এসব দোকানের কারনে যানজটের কবলে পড়ে স্থানীয়দের। মহাড়করে নিরাপত্তায় তাদের দেখা মেলা ভার।নানা অভিযোগের বিষয়ে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান,তিনি ও থানার কোন কর্মকর্তা কোন ধরনের বানিজ্যের সাথে জড়িত নন। এর পরও যারা তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে তারা হয়ত কোন অনৈতিক সুবিদা চেয়েছিল যা তাদের দেয়া হয়নি।হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুরের পুলিশ সুপার আলী আহমদ খান জানান,মহাসড়কের তিনচাকার যান চলাচলের কোন নিয়ম নেই। এসব যানবাহন মহাসড়ক থেকে পুলিশ আটক করে প্রচলিত বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে এটাই স্বাভাবিক। তবে টাকার বিনিময়ে অবৈধ যান আটক করে ছেড়ে দেয়ার কোন অভিযোগ তিনি পাননি। এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।