মঙ্গলবার, ০৯ মার্চ ২০২১, ০৩:০১ পূর্বাহ্ন
শেখ আমিনুর হোসেন,সাতক্ষীরা ব্যুরো চীফ: সাতক্ষীরা শহরের গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি এলাকায় দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী আসফিয়া খাতুন চাঁদনীর আত্মহত্যার ঘটনায় নতুন তথ্য বেরিয়ে এসেছে। প্রেমিক শহরের গড়েরকান্দার আবু হুরাইরা বিয়ের জন্যে বার বার চাপ সৃষ্টি করায় তা মেনে নিতে না পারার একপর্যায়ে চাঁদনী আত্মহননের পথ বেছে নেয় বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সরজমিনে সোমবার সকালে সাতক্ষীরা শহরের গড়েরকান্দা রহমতপুর জামে মসজিদ এলাকায় গেলে মনিরুল ইসলাম, সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন জানান, তাদের এলাকার আব্দুর রহমান মুন্সির ছেলে আবু হুরাইরার সঙ্গে ভালবাসার বিষয়টি সকলে জানতো। যদিও হুরাইরার বাবা ও মা মেনে নিতে চাইনি। সম্প্রতি চাঁদনীকে বিয়ের জন্যে পীড়াপীড়ি করলে বাবা ও মা জানতে পারে গালিগালাজ করে হুরাইরাকে। বিষয়টি চাঁদনীর মা তহুরা খাতুনকে সতর্ক করে আব্দুর রহমান মুন্সি।
তবে গফুর সাহেবের বাগানবাড়ি এলাকায় গেলে দেখা গেছে চাঁদনীর মৃত্যুতে মিলাদ অনুষ্ঠান এর জন্যে তাবারক তৈরির সময় চাঁদনীর মা তফুরা খাতুন, তার মামা হায়দার আলী, আদম আলীসহ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। জানতে চাইলে আদম আলী জানান, মৃত্যুর আগে হায়দার বা তিনি কখনো মেহেদী হাসানের উত্যক্ত করার বিষয়টি জানতেন না। ঘটনার পর তারা শুনছেন।
একই এলাকার চায়না বেগম, পানা খাতুন, রজব আলী, মিজানুর রহমান, বিউটি খাতুনসহ কয়েকজন জানান, প্রতিবশি রুনা খাতুনের বাড়িতে অপরিচিত লোকজনদের যাতায়াত ও রাকিবের বাড়ির জানালায় টিন সেটে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় মেহেদী হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। মেহেদী হাসানকে সঙ্গে নিয়ে রাকিব ও তার বাবা তাদের জানালার টিন খুলে ফেলা নিয়ে শালিসী বৈঠক হয়। ২০ অক্টোবর সকালে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে চলার সময় মেহেদী হাসান তাকে গালিগালাজ করে। গত ২৭ অক্টোবর দুপুর রুমা খাতুনের বাড়ির পাশে অবস্থানকারি মুনি খাতুনের সঙ্গে মেহেদীর কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মেহেদী মোটর সাইকেল চালিয়ৈ বাড়ি থেকে বেরিয়ে বৈকারী এক আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। মুনি খাতুনের অভিযাগ অনুযায়ি কোন কাজ না হওয়ায় বিকালে সুলতানপুরের কয়েকজন যুবক এসে মেহেদীর বাড়িতে চড়াও হয়। উত্যক্ত করার অভিযাগে রবিবার চাঁদনীকে দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি অভিযোগ করান মুনি ও রুনা। মেহেদী বৈকারী আত্মীয়ের বাড়িতে থাকাকালিন সোমবার সকাল নয়টার দিকে চাঁদনী আত্মহত্যা করে। বিকাল ৫টায় পুরাতন সাতক্ষীরা ফাঁড়িতে আপোষনামায় সাক্ষর করানোর নামে ডেকে এনে উপ-পরিদর্শক মনির হাসান মেহেদীকে আটক করে। তারা দাবি করেন মুনি খাতুন, রুনা খাতুন, চাঁদনী, তার মা তফুরা ও হুরাইরার মোবাইল ফোনের ভয়েস রেকর্ড যাচাই করলে আত্মহত্যার মুল রহস্য উদঘাটন হবে। পাশাপাশি তফুরা খাতুন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এলে তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। একইভাবে আত্মগোপন করে থাকা হুরাইরা ও তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। ডায়রীর লেখা অনুযায়ি তদন্ত করতে হবে। বাটকখালি কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গেলে চাঁদনীর একমাত্র ঘনিষ্ট বান্ধবী খাদিজা খাতুন জানায়, তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে আবু হুরাইরার সঙ্গে প্রেম ছিল চাঁদনীর। গরীব প্রেমিককে মিশনের পাটের দড়ি বানানোর টাকা দিত চাঁদনী। সস্প্রতি হুরাইরা চাঁদনীক বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করলে সে পড়াশুনা শেষ করার জন্য সময় চায়। বিষয়টি তার ডায়রীতে লেখে। বদরুদ্দিন স্যার, ফারুক স্যার ও স্কুলে যাওয়া-আসার পথে হুরাইরা চাঁদনীর সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলতো। হুরাইরার বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি ও মায়ের বকুনির জন্য চাঁদনী তার বাম হাত কেটে রক্তাক্ত করছে কয়েকবার। মেহেদী হাসান কখনো চাঁদনীকে উত্যক্ত করছে এমনটি না শুনলেও ওই ছেলেটি স্হানীয় লোকজনদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করতো। ফারক স্যারের কাছে পড়ে ফেরার সময় ২৪ অক্টোবর আবু হুরাইরা সরকারি কলেজ মোড়ে চাঁদনীর সঙ্গে দেখা করলে তারা তিনজন একত্র শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্ক গুড়পুকুরের মেলায় আসে। পথিমধ্যে বিয়ের কথা বলায় হুরাইরার সঙ্গে বচসা হয় চাঁদনীর। একপর্যায়ে গত ২৮ অক্টোবর এলাকার দু’মহিলার কথা মতে জেলা প্রশাসকের কাছে মেহেদী হাসানের বিরুদ্ধে দরখাস্ত করে। এরপর থেকে চাঁদনীর মনের অবস্থা ভালো ছিল না। ওই দিন বিকালে
চাঁদনী তার বাসায় আসে। পরদিন সকালে মনির স্যারের বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে মা তফুরা খাতুন চলে গেলে চাঁদনী তার বাসায় এসে তাকে না পেয়ে পার্শ্ববর্তী এক আপুর সঙ্গে দেখা করে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর জানতে পারে যে চাঁদনী আত্মহত্যা করেছে। তবে চাঁদনীর মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পুলিশ তার ডায়রী উদ্ধার করেছে এমন খবরে হুরাইরা ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে।
কারিমা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তাহের জানান, মৃত্যুর আগে তারা কোন দিন জানতে পারেননি যে চাঁদনীকে পথে ঘাটে কেউ উত্যক্ত করতো কিনা। টেষ্ট পরীক্ষায় চাঁদনী ইংরাজীতে অনুত্তীর্ণ হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনের কর্মকর্তারা অনেক কিছু জানলো অথচ দ্বিতীয় অভিভাবক হিসাবে তিনি জানতে পারলেন না এটা দুর্ভাগ্যজনক।