কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, যেকোনো উপায়ে আগে মশা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এখুনি মশা নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া না হলে মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময়ে মশার ঘনত্ব বেড়ে চরমে পৌঁছাবে। এমনকি অতীতের চিকনগুনিয়ার মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। কিউলেক্স মশার কামড়ে অনেক সময় গোদরোগ হয়। এটি হলে হাত-পা ফুলে শরীরের বিভিন্নস্থান বড় হয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কিউলেক্স মশার প্রজনন মৌসুম। প্রতি বছরের এ সময় মশার আধিক্য দেখা যায়। তারপরও নগর কর্তৃপক্ষ মশার বিস্তার বেড়ে যাওয়ার দায় এড়াতে পারে না। সময় মতো কার্যকরী ওষুধ না ছিটানোয় মশার বিস্তার বেড়েছে। এ ছাড়া সিটি করপোরেশন যেসব ওষুধ প্রয়োগ করছে তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। করপোরেশন যে ওষুধ ছিটাচ্ছে, এতে মশা নিধন হচ্ছে না। বরং এতে বায়ু দূষণ হচ্ছে। মশককর্মীরা ওষুধ ছিটাতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
ফগার মেশিন নিয়ে শুধু বিভিন্ন এলাকায় ধোঁয়া সৃষ্টি করছেন তারা। ফলে এর কোনো কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না। মশা নিয়ন্ত্রণে মেয়র ও কাউন্সিলরদের নজরদারি না থাকায় পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। জানা যায়, সম্প্রতি ওয়াসা থেকে খালের দায়িত্ব গ্রহণ করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। এরপর খালসহ জলাশয় ও নালাগুলো পরিষ্কার করছে সংস্থা ২টি। এর ফলে মশা লোকালয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না অভিজাত এলাকার বাসিন্দারাও।
রাজধানীর ডেমরা এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ তারা। রাতদিন সমান তালেই মশা বিস্তার করছে। মশারি টানিয়ে কিংবা স্প্রে করে, কয়েল জ্বালিয়েও নিস্তার পাচ্ছেন না। সিটি করপোরেশনের মশককর্মীদের ওষুধ ছিটাতে দেখা যাচ্ছে না। মেরুল বাড্ডা এলাকার বাসিন্দারা জানান, মাঝে মধ্যে ফগার মেশিন কাঁধে নিয়ে সিটি করপোরেশন কর্মীদের এলাকায় ঘুরতে দেখা যায়। ওষুধ ছিটাতে তেমন একটা দেখা যাচ্ছে না। নির্ধারিত কিছুস্থানে ওষুধ ছিটানো হলেও মশা মরে না। বরং ওইদিন মশার উৎপাত আরো বেশি দেখা যায়। মিরপুরের বাসিন্দা ফারজানা রহমান বলেন, মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ। বিগত সময়ের চাইতে এ বছর মশার উপদ্রব তুলনামূলক বেশি। মশার ওষুধ ছিটালেও কোনোভাবে মশা নিয়ন্ত্রণে আসছে না। স্প্রে ও কয়েল ব্যবহার করলেও মশার কামড় থেকে রক্ষা পাচ্ছি না।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে বলা হচ্ছে, কিউলেক্স মশা নিধনে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে সংস্থাটি। চলতি মাসের ২০শে ফেব্রুয়ারি থেকে ডিএনসিসি’র বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে ওষুধ প্রয়োগ করছে তারা। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে মশককর্মীরা প্রতিটি এলাকায় নিয়মিতভাবে ওষুধ প্রয়োগ করে আসছেন। মশা নিয়ন্ত্রণে সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিএনসিসি কয়েকটি ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন ক্রয় করেছে। এর মধ্যে গত ২৩শে ফেব্রুয়ারি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে একটি ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন হস্তান্তর করেছে ডিএনসিসি। এই ফগার মেশিন দিয়ে অল্প সময়ে ওষুধ প্রয়োগ করা যাবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেছেন, গত কয়েক বছর এক ধরনের ওষুধ ছিটিয়ে আসছে সিটি করপোরেশন। এই ওষুধ মশার অনেকটা সহনীয় হয়ে গেছে। ফলে নিয়মিত ওষুধ ছিটালেও তেমন একটা ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখন ওষুধের পরিবর্তন আনা হচ্ছে। মশা নিধনে ওষুধের মান বারবার পরীক্ষা করা হচ্ছে। আগামী দুই সপ্তাহ পর থেকে নতুন ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। এতে মশা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, যখনই মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত ওষুধের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পাই, সঙ্গে সঙ্গে তা পরীক্ষা করানো হয়। আমরা এতোবার পরীক্ষা করাই যে, সবাই অতিষ্ঠ হয়ে যায়। ডেঙ্গুর জন্য যে ওষুধ প্রয়োগে সুফল পাওয়া যায়, কিউলেক্স মশার জন্য তা কার্যকর হয় না। সেজন্য আমরা ওষুধ পরিবর্তন করছি। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন ওষুধ চলে আসবে। সেটা আমরা কিউলেক্স মশার জন্য ব্যবহার করবো। কিউলেক্স মশার উপদ্রব বাড়ার যে অভিযোগ আসছে, সেটা নিরসন হবে।