(৪)শাম-এ বাংলা অধ্যক্ষ মাওলানা আলাউদ্দীন শাহ (রহ):
তিনি ১৯৫৮ সালে চন্দনাইশস্থ জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসা হতে দাখিল পাস করার পর ১৯৫৯ সালে চট্টগ্রাম দারুল উলূম আলিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন। তিনি এ মাদরাসা হতে আলিম ও ফাজিল কৃতিত্বের সাথে পাস করেন। ১৯৬৬ সালে মাদরাসা-ই-আলিয়া ঢাকা হতে কামিল পাস করেন। ১৯৬৮ সালে সরকারী বৃত্তি নিয়ে মাদরাসা-ই-আলিয়া,ঢাকায় ছাত্র থাকাকালীন সময়ে “খাওয়াতীন-এ ইসলাম-কে কার নাম” উর্দু ভাষায় গবেষণা থিসিস রচনা করেন। এটি প্রকাশিত হয় নি। তাঁর প্রণীত “লাইলাতুল কদর” শীর্ষক পুস্তকটি (উর্দু ও বাংলা) প্রকাশিত হয়েছে। তিনি আঞ্জুমানে মুহিব্বানে রসূল এর পৃষ্ঠপোষকতায় পাকিস্তানের খ্যাতনামা আলিম মুফতি শফি ওকাড়বী (রহ) এর রচিত সাওয়াবুল ইবাদত ও বরকাতে মীলাদ উর্দু দু’টি বই বঙ্গানুবাদ করেন। যা যথাক্রমে ১৯৭৯ ও ১৯৮১ সালে প্রকাশিত হয়।
কর্মজীবনে জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ, রাঙ্গুনিয়া নূরুল উলূম সিনিয়ার মাদরসায় শিক্ষকতা করেন। পটিয়া অহিদিয়া ও বোয়ালখালী চরণদ্বীপ রিজভীয়া মাদরাসায় অধ্যক্ষ ছিলেন। তিনি ইন্তেকালে পূর্ব পর্যন্ত সোবাহানিয়া আলিয়া কামিল মাদরাসায় মুহাদ্দিস পদে কৃতিত্বের সাথে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৯৮ সালের ১৯ জুলাই ইন্তেকাল করেন।
(৫) মাওলানা বোরহান উদ্দীন:
তিনি জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় বাল্য হতে আলিম পর্যন্ত, দারুল উলূম কামিল মাদ্রাসা হতে ফাজিল এবং সরকারী মাদ্রাসা আলিয়া-ঢাকা হতে কামিল সহ প্রতিটি পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সাথে চট্টগ্রামের রেলওয়ে হাই স্কুলে সহকারী মৌলভী হিসেবে অবসরের পূর্ব পর্যন্ত দক্ষতা সাথে নিবিড়ভাবে দায়িত্ব পালন করেন। কর্মজীবন শুরুতে তিনি কিছুদিন জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন।বর্তমানে তিনি ইসলামের খেদমতে মাওলানা মন্জিল মুফতি শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদে খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
তিনি ৩০ আগষ্ট ২০১৯ রোজ শুক্রবার রাত ১১.০০ ঘটিকায় তাঁর প্রভুর ডাকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। পরের দিন বিকেল ৩.০০ ঘটিকায় জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার ঐতিহাসিক ময়দানে তাঁর জানাযা নামায অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মেঝো ভাই মাওলানা মাহফুজুর রহমানের ইমামতিতে উক্ত জানাযার নামাজ সম্পন্ন হয়। পরে তাঁকে তার পারিবারিক কবরস্থান মাওলানা মঞ্জিলে দাফন করা হয়।
(৬) মাওলানা মঈন উদ্দীন:
তিনি বাল্যকালে জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে দাখিল, আলিম ও সরকরী মাদ্রাসা আলিয়া-ঢাকা হতে ফাজিল ও কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। একই সাথে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনী প্রতিষ্ঠান জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় সিনিয়র সহকারী মাওলানা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ইসলামের খেদমতে মাওলানা মন্জিল মুফতি শফিউর রহমান (রহ) জামে মসজিদে ইমাম হিসেবে এবং স্থানীয় একটি মসজিদে খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি চন্দনাইশের সুবিখ্যাত অলী হযরত আমিনুল্লাহ শাহ মাজার (প্রকাশ বুড়ো মাওলানা সাহেব) জামে মসজিদে খতীব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
(৭) মাওলানা তাজ উদ্দীন:
তিনি জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা হতে দাখিল, আলিম ও ফাজিল এবং সরকারী আলিয়া মাদ্রাসা ঢাকা হতে কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। তিনি কর্মজীবনে জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় শিক্ষক,হাটহাজারীর লাঙ্গলমোড়া ইসলামিয়া সিনিয়ার মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ, চন্দনাইশের এলাহাবাদ ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি জামালপুরের আল আমিন জামিরিয়া কামিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি চন্দনাইশের সুবিখ্যাত অলী হযরত আমিনুল্লাহ শাহ মাজার (প্রকাশ বুড়ো মাওলানা সাহেব) জামে মসজিদে খতীব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
(৮) কে এম হামিদ উদ্দীন:
তিনি জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় বাল্যকাল হতে ফাজিল পর্যন্ত প্রত্যেকটি ক্লাসে কৃতিত্ব অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি মধুবন চাকুরী ও পাশাপাশি ব্যবসা করতেছেন।
(৯) মাওলানা ফরিদ উদ্দীন:
তিনি জোয়ারা ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় বাল্যকাল হতে ফাজিল পর্যন্ত এবং সোবাহানিয়া মাদ্রাসা হতে কামিল পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করতেছেন।এর আগে তিনি মধুবনে চাকুরী করতেন।
মুফতি পরিবারের অধিকাংশ সদস্য শিক্ষকতার সাথে জড়িত। মুফতি পরিবারের কাছে যারা পড়েছেন কুরআন হাদীসের দরস নিয়েছেন তাদের সংখ্যা এত বেশি যে তাদেরকে সংখ্যায়িত করা এখানে সম্ভব নয়। বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে যে প্রতিষ্ঠানে খেদমত হচ্ছে, সেখানেই তাঁদের ছাত্র আছে। বিভিন্ন মাদরাসা, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ মুহাদ্দিস, প্রফেসর হিসেবে অনেক ছাত্রই আজ নিয়োজিত। মুফতি পরিবারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছে সঠিক সুন্নী মতাদর্শ ভিত্তিক ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিপুল সংখ্যক ইসলামী চিন্তাবিদ এবং ইসলামী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সহ আরো অনেক কর্মীবাহিনী। আর অসংখ্য শিষ্য বাংলাদেশের প্রায় প্রত্যন্ত অঞ্চল ছাড়া দেশের বাইরেও অনেক ভাল ও গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োজিত। তাছাড়া দেশের প্রশাসনিক লোকদের মধ্যে মুফতি পরিবারের সদস্যরা নিয়োজিত আছে। তারা নানাভাবে ধর্মীয় ও সামজিক ও রাষ্ট্রীয় নানাক্ষেত্রে খেদমত আন্জাম দিয়ে যাচ্ছেন ।
লেখক: কলামিস্ট।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব, বাংলাদেশ মুসলমান ইতিহাস সমিতি।
প্রতিষ্ঠাতা, চন্দনাইশ মুসলিম সাহিত্য সমাজ।