বুধবার, ০৬ জুলাই ২০২২, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন
মানব মন্ডল, কোলকাতা থেকেঃ
মাটি দিয়ে একটা অবয়ব বা পুতুল করে, তাকে পুড়িয়ে তারপর রঙিন গালার প্রলেপদিয়ে। আবার সরু গালার কাঠি গলিয়ে অতি দ্রুত হাতে চোখ, নাক, মুখ ইত্যাদির নকশার মাধ্যমে নিজের শিল্পীসত্বার প্রকাশ করাটা সহজ কাজ নয় । গালার পুতুল খুবই রঙিন, জল দিয়েও মোছা যায় ফলে এগুলো কে খুব সুন্দর দেখায়। কিন্তু বাংলার এই পুতুল শিল্প বর্তমানে লুপ্তপ্রায়। ।
শিরিষ আর কুসুম গাছের বর্জ গালা । গালা পুতুলের আসল কাজ গালার সুতো তৈরির কাজ। পুতুল তৈরির মতই গালার সুতো আর খড়ি তৈরির কাজটিও বেশ সময়-দক্ষতাসাধ্য জটিল প্রক্রিয়া। এক্ষেত্রে বাঁশের দুটো কঞ্চির দণ্ড নেওয়া হয়। সেটিকে গরম করে দুটি দণ্ডের মাথা দিয়ে গরম গালা চটকে চটকে সুতো তৈরি হয় । আর অলঙ্করণের জন্য এটা ব্যবহার করা হয়। গালার খড়ি তৈরি হয় সাধারণ রং করার জন্য। হলুদ হরিতাল দিয়ে এই রঙ তৈরি হয়। পুতুলে রং করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে মানে আর্ধেক ভেঙে কলসির মুখ মাটিতে বন্ধ করে, মুখটি মেঝের দিকে রেখে, আধখোলা কলসির পেটে গরম করা হয় বা জ্বালানো হয় কাঠকয়লা দিয়ে।কাঠকয়লা ধিকিধিকি করে জ্বেলে দুটি একটি পুতুল গরম করা হয়।
ছবি, সঞ্জয় ঘোষ ( প্রত্নতত্ব গবেষক)
এরপর পুতুলের নিচের দিকে থাকা ফুটোতে লোহার দন্ড বা বাঁশের লাঠি আটকে দন্ডটিতে আটকানো পুতুলকে আগুনের ওপরে ধরে, ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে প্রয়োজনীয় রং আর অলঙ্করণ হয়।গালার পুতুল এখন তৈরি করেন ,শিল্পী বৃন্দাবন চন্দ, ঠিকানা সাকিন খড়ুই গ্রাম, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিমবঙ্গ।বাংলার ঐতিহ্যবাহী গালার পুতুলের বৃন্দাবন চন্দ কারিগরী আর গালার অতীত ঐতিহ্যের অন্যতম ধারকবাহক। উই ঢিপির মাটি দিয়ে তৈরি করেন নানা ধরনের পুতুল। তারপরে পোড়ানো।
গালা গলিয়ে হরিতাল মিশিয়ে নানান রঙ করা হয়। তাঁর পর গালার লাঠি তৈরি করে গায়ের রঙ করেন আর গালার পৈতে(সুতো) করে পুতুলের সাজসজ্জা। গালার গন্ধে ধোঁয়ায় জীবনীশক্তি ক্ষয় হয়। চোখের জ্যোতি যায়।তাঁর দাদা শ্রীবাস চন্দ এই কাজ করতে গিয়ে অন্ধ হয়েছেন। প্রচার ও বাজারের অভাব আজ তাঁদের এই কাজ করে পেট চলে না।গালা দাম বাড়ছে। অথচ পুতুলের অথবা গয়নার দাম বাড়ালে বাজার হারানোর সমস্যা।
তাই ইসলাম বাজার একসময় গালার পুতুল পাওয়া গেলেও আজ পাওয়া যায় না। বীরভূম এর সুরুল এ ইউসুফ মোল্লা পুতুল বেশ সুনাম থাকলেও পাওয়া যায় না তার কাজ। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে গালার পুতুল।