বৃহস্পতিবার, ০৭ জুলাই ২০২২, ০৭:২২ পূর্বাহ্ন
রেদওয়ানা আফরিন, রিপোর্টারঃ
শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে তিন পরিবারের চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে। এ রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধের দাবিতে এলাকাবাসী বিক্ষোভ করেছে।
আমতলী উপজেলার উত্তর রাওগা গ্রামের মাঝগ্রাম এলাকায় গত মঙ্গলবার দুপুরে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকাবাসী।
জানা গেছে, সিআরআইআইপি প্রকল্পের অধিনে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের মালশিরামের বাঁধ থেকে শুরু করে মাঝগ্রাম হয়ে উত্তর রাওগা গ্রামের কাসেম মীরা বাড়ি পর্যন্ত দুই কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে উপজেলা প্রকৌশল অফিস। ওই কাজ পায় ঠিকাদার মনির খান। এই দুই কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা প্রভাবশালী রহমান মীরা, শাহআলম মীরা ও বারেক মীরা এই তিনটি পরিবারের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে। বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন ঠিকাদার মনির খান প্রাক্কলন অনুসারে রাস্তার কাজ না করে তিন পরিবারের সাথে আঁতাত করে তাদের সুবিধার জন্য শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। ১৫ দিন আগে ১৬ ফুট উচ্চতায় ২৯ ফুট পাদদেশের এ রাস্তার কাজ শুরু হয়।
এদিকে কার্যাদেশে স্থানীয় শ্রমিক দ্বারা রাস্তা নির্মাণের কথা উল্লেখ থাকলেও ঠিকাদার ভেকু মেশিন দিয়ে ফসলি জমি কেটে এই রাস্তা নির্মাণ করছেন। ভেকু(এসকেভেটর) দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করায় ফসলি জমি গভীতে পরিণত হচ্ছে। ওই জমিতে আগামী ১০ বছরে ফসল অনিশ্চিত বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। ভেকু দিয়ে ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণকাজ বন্ধে জমির মালিকরা বাধা দেয়।
এতে ঠিকাদারের সহযোগী মো: বেল্লাল মিয়া তাদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন কৃষক লতিফ হাওলাদার, রক্তন, জাহাঙ্গীর ও একিন আলী খান।
হতদরিদ্র শাফিয়া খাতুন বলেন, মোর ৭ হড়া জাগা আছে। হেই জাগায় রাস্তা হরবে। হ্যালে মোর খয়রাত করা ছাড়া আর কোনো পোত থাকবে না। মুই মোর জমিদ্দা রাস্তা নেতে দিমু না।
দরিদ্র চন্দ্রভানু বলেন, মোর ৯ হড়া জাগায় রাস্তা হরলে মোর ওড়াগাড়া লইয়্যা ঢাহা যাইতে আবে। হ্যার চাইয়ে মোরো মাইরা হালান।
জহুরা বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, মুই বিধবা মানু, স্বামীর ৬ হাড়া জাগা পাইছি। হেই জাগায় রাস্তা হরবে। মোরে বিষ দেন। মুই বিষ খাইয়্যা মইরা যাই।
ভুক্তভোগী নুরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ফোরকান মিয়া, জালাল খান ও নাশির হাওলাদার বলেন, উপজেলা প্রকৌশল অফিস কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদার মনির খান শতাধিক পরিবারের ফসলি জমি কেটে প্রভাবশালী তিন পরিবারের চলাচলে রাস্তা নির্মাণ করছেন। তারা আরও বলেন, কার্যাদেশ অনুসারে রাস্তার কাজ না করে প্রায় এক কিলোমিটার ফসলি জমি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন ঠিকাদার। এ রাস্তা নির্মাণকাজ বন্ধের দাবি জানান তারা। তারা আরও বলেন, ঠিকাদার ভেকু দিয়ে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করছেন। এতে ফসলি জমি গভীর গর্ত হচ্ছে। আগামী ১০ বছরে ওই জমিতে ফসল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
ফসলি জমির মালিক হিরন হাওলাদার বলেন, প্রভাবশালী তিন পরিবারের চলাচলের পথ নির্মাণে আমার ৪৫ শতাংশ জমি রাস্তায় দিতে হবে। জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করা হলে আমার পরিবার-পরিজন নিয়ে পথে বসতে হবে। আমার রেকর্ডীয় জমিতে আমি রাস্তা নির্মাণ করতে দেবো না।
ঠিকাদার মনির খান তার সহযোগী বেলাল মিয়ার জমির মালিকদের ভয়ভীতি দেখানের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্থানীয়রা জমি না দিলে কাজ বন্ধ থাকবে। যতটুকু কাজ করেছি তত কাজের বিল নেব।
আমতলী উপজেলা এলজিইডির কমিউনিটি অর্গানাইজার শ্রীদাম চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ফসলি জমি কেটে কোনোমতেই রাস্তা নির্মাণ করা যাবে না। আমতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।