জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল : নড়াইলের কালিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার ঘুষ লেনদেনের প্রতিবাদ করায় এক ইউপি সদস্য ও এক ব্যবসায়ীকে ‘মিথ্যা’ মামলায় ফাঁসিয়ে কারাগারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন এলাকাবাসী। এসময় তারা নির্বাচন কর্মকর্তার বিচার, তার দায়ের করা ‘মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং কারাবন্দি ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানান।
শনিবার (১ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার চাঁচুড়ি বাজার এলাকায় নড়াইল-কালিয়া আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে এসব কর্মসূচি পালন করা হয়।
মামলায় গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা দু’জন হলেন, কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আনিস শেখ ও চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির প্রচার সম্পাদক মিল্টন মোল্যা।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, গত বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে কালিয়া উপজেলার পুরুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে ভোটার হালনাগাদের কাজ চলছিল। সেখানে উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের নেতৃত্বে কাজ করছিল একটি দল। ওই দলের একজনের নাম সাকিল। তার মাধ্যমে ভোটার হতে আসা সাধারণ মানুষকে বিভিন্নভাবে হয়রানি করে ঘুষ নিচ্ছিলেন নির্বাচন কর্মকর্তা। এসময় পরিষদে অবস্থানরত ইউপি সদস্য আনিস ও ব্যবসায়ী মিল্টন এ কাজে বাধা দেন।
এক পর্যায়ে যাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন, তাদের একজনকে টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হন সাকিল ও নির্বাচন কর্মকর্তা। টাকা ফেরত দেওয়ার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ ওই দিন এখান থেকে কালিয়া থানায় গিয়ে নির্বাচন কর্মকর্তা বাদী হয়ে একটি মিথ্যা মামলা করেন। সেই মামলায় বৃহস্পতিবার রাতেই ইউপি সদস্য আনিস ও ব্যবসায়ী মিল্টনকে রাতে গ্রেফতার করে পুলিশ।
চাঁচুড়ি বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবিদ হাসান বলেন, মামলায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মকর্তাদের মারধর করা হয়েছে; কিন্তু বাস্তবে এখানে তেমন কিছুই ঘটেনি। অন্যায়-দুর্নীতি করলেন ওনারাই (নির্বাচন কর্মকর্তা ও টিমের সদস্য), ঘুষের টাকাও ফেরত দিল, তার পরও কোন ক্ষমতাবলে উনারা মামলা করলেন?
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে যদি জেল-জুলুমের শিকার হতে হয়, আমরা এ অন্যায় মেনে নিতে পারি না। নির্বাচন অফিসের লোকজনের দোষ ঢাকতে আনিস ও মিল্টনের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। আমরা আনিস ও মিল্টনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আজ এখানে সমবেত হয়েছি। অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারের নিন্দা জানাচ্ছি। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদের মুক্তি না দিলে আমরা নির্বাচন অফিস ঘেরাও করব।
তবে নড়াইল জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল ছালেক বলেন, আমি যতটুকু জানি, ভোটার হালনাগাদের সময় ইউপি সদস্য আনিস বারবার অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের ভোটার করার জন্য হালনাগাদকারীদের চাপ দেন। এ কাজে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাধা দেন। তখন তারা (ইউপি সদস্য ও তার সঙ্গীরা) কোনো পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হালনাগাদ কাজে নিয়োজিত নির্বাচন অফিসের এক আউটসোর্সিং কর্মীর সঙ্গে টাকাপয়সার লেনদেন করেন। এটা পরিকল্পিতভাবেই তারা করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কর্মী দোষ করে থাকলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব, কিন্তু তারা সরকারি কাজ করার সময় ওই ছেলেকে মারধর করেছেন। একই সঙ্গে তারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে আটকে কিছু অপ্রাপ্তবয়স্ক ভোটারদের ফরমে স্বাক্ষর নিয়েছেন। আমার জানামতে এটুকু হয়েছে। এর পরও কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তবে এসব অভিযোগের ব্যাপারে বক্তব্য জানতে কালিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌসের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে। যে কারণে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাশিদুল ইসলাম বলেন, নির্বাচন কর্মকর্তার করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার রাতে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়। শুক্রবার আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠান। মামলার তদন্ত চলছে, সে ক্ষেত্রে মানববন্ধনকারীদের অভিযোগও মাথায় রাখা হচ্ছে।