তানভীর সোহেল, রংপুর মহানগর
হারাগাছে স্কুল পড়ুয়া নাবালক ছেলে ও মেয়েদের দ্বারা বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করছে নিম্ন মানের মশার কয়েল। এবং এসব মশার কয়েল বাজারজাত করছে বিভিন্ন নামে বে-নামে। স্থানীয়সহ সচেতন মহলের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজনকে ম্যানেজ করে চালিয়ে আসছে হারাগাছের এই নিশাত কয়েল কোম্পানি। বিভিন্ন তথ্য ও অভিযোগ সূত্রে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, হারাগাছ পৌরসভা হকবাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোন রকম সার্টিফিকেটধারী কেমিস্ট্রিম্যান ছাড়াই রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে হাত গ্লাভস বা মাস্ক ছাড়াই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কমলমতি শিশুসহ বয়োজ্যেষ্ঠ নারী ও পুরুষ দ্বারা প্রস্তুত করছে যত্রতত্র মশার কয়েল। এসময় ক্যামেরায় ছবি ধারণ করতেই বাধা দেয় কর্তৃপক্ষ। সেই সময়ে সটকে পড়ে কমলমতি শিশুরা। যা শ্রমিকসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের জনস্বাস্থ্য ফেলেছে চরম হুমকির মুখে।
স্থানীয়দের অভিযোগ কাঠের গুঁড়া রং আর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে তৈরি করা এই মশার কয়েল কারখানায় শ্রম দেয়া শ্রমিকদের রয়েছে বেতন বৈষম্য।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিশু শ্রমিকের অভিভাবকরা প্রতিবেদককে বলেন, আমরা হতদরিদ্র অসহায় ও শারীরিক ভাবে উপার্জন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা মানুষ, যার ফলে এসব অসাধু ব্যবসায়ী আমাদের সন্তানদের দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে ১২ ঘন্টা শ্রম দিয়ে দিন হাজিরা দেয় মাত্র ২ থেকে আড়াই শত টাকা। সেই টাকা দিয়েই কোনো রকমে সংসার চলে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে বসবাসকারী’রা বলেন, রাসায়নিক পদার্থের বিষাক্ত ধুয়ায় এ এলাকা মারাত্মক ভাবে পরিবেশ দূষণ করছে।
এতে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে আমাদের পরিবার। এনিয়ে প্রতিবাদ করতে গেলেই বাঁধে বিভেদ।
নিশাত কয়েল কোম্পানির মালিক এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করে না। তারা আরো বলেন,এই ফ্যাক্টরিতে উৎপাদনকৃত মশার কয়েল একেবারেই ভুয়া।যা দিয়ে মশা তো দুরের কথা উল্টো শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় মানুষ।
এ রকম নানা অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নিয়াজ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের বিএসটিআই অনুমোদিত কোম্পানি, যদি কিছু করার থাকে বিএসটিআই অফিস করবেন, তিনি আরো বলেন, শুধু আমার প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রম নয় আশেপাশের যত প্রতিষ্ঠান আছে সবগুলো প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রম হয়
বলেই তিনি অকপটে এড়িয়ে যান।
এবিষয়ে বাংলাদেশ স্টান্ডার্ডাস এন্ড ট্রেষ্টিং ইনস্টিটিউট এর রংপুর অফিসের ফিল্ড অফিসার খন্দকার জামিনুর রহমান জানান, আমরা যাচাই-বাছাই করে ওই প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছি,এখন যদি সেই নিয়ম অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান না চলে তাহলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিশুশ্রম ও শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বৈষম্য’র বিষয়ে অভিহিত করতে রংপুর শ্রম অধিদপ্তর এর সহকারী পরিচালক আতাউর রহমান মন্ডলকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রংপুর সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজার রহমান বলেন, এসংক্রান্ত বিষয়ে আমার জানা ছিলো না, বিষয়টি যেহেতু জানলাম অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে ক্ষতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।