বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সকল সাংগঠনিক কার্যক্রম স্থগিত করেছে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি।
কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ২ ফেব্রুয়ারি থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির অধীনস্থ সকল ওয়ার্ড,ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌর ইউনিটের সকল পর্যায়ে বিএনপি’র সদস্য ফরম বিতরণ ও কমিটি গঠন কার্যক্রম স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
রোববার (২ ফেব্রুয়ারি) পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতাদের সাথে জেলার শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সিদ্ধান্ত মোতাবেক সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী তার ফেসবুক আইডিতে এই নির্দেশ যথাযথ ভাবে পালন করার জন্য সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সকল পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দকে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন।
এছাড়া বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিব।
তিনি বলেন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাতক্ষীর ৪টি সংসদীয় আসনে সদস্য সংগ্রহ করে সম্মেলনের কথা ছিলো। তবে কেউ কেউ সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অমান্য করে কমিটি দিয়ে দলের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেন। এ কারণে সাংগঠনিক টিম জেলার শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করেছে। বৈঠকে সবার কথা শুনে সব ধরনের সম্মেলন, কমিটি গঠন স্থগিত করা হয়েছে।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক ডাকসু নেতা আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রকাশনা সম্পাদক সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি হাবিবুল ইসলাম হাবিব, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু, সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি রহমতুল্লাহ পলাশ, আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, যুগ্ম আহবায়ক তারিকুল হাসান, মৃণাল কান্তি রায়, সদস্য সচিব আব্দুল আলিম, আয়নুল ইসলাম নান্টা প্রমুখ।
জানা গেছে, গত ১৬ জানুয়ারি খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলা বিএনপির অন্তর্গত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলা বিএনপির সম্মেলন সফল করতে চারটি সাংগঠনিক টিম গঠন করা হয়। একই সাথে সব সম্মেলন শেষে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করে সাংগঠনিক টিম।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক জয়ন্ত কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত গত ১৬ জানুয়ারি এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এদিকে, সাংগঠনিক টিমের এসব সিদ্ধান্তের পর সম্প্রতি সময়ে কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে পক্ষ-বিপক্ষ গ্রুপের দাঙ্গা-হামলা ও সংঘর্ষে সাতক্ষীরায় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে বিএনপি। এতে ক্রমান্বয়ে শক্তি হারাচ্ছে দলটি। সম্প্রতি শ্যামনগর, কালীগঞ্জ, আশাশুনি ও দেবহাটা উপজেলায় সম্মেলন ও কমিটি ঘোষণা নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে ১৪৪ ধারা জারির ঘটনা ঘটে । এসবে ক্ষুব্ধ বিএনপির হাই কমান্ড।
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ তারিকুল হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০ জানুয়ারির মধ্যে ইউনিয়ন ও পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ে সদস্য সংগ্রহ চূড়ান্ত করতে হবে। ২৭ জানুয়ারির মধ্যে সব ওয়ার্ড (ইউনিয়ন ও পৌরসভার অন্তর্গত) সম্মেলন শেষ করতে হবে। ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব ইউনিয়ন সম্মেলন শেষ করতে হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সব উপজেলা ও পৌরসভার সম্মেলন শেষ করার নির্দেশনা ছিল।
তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক টিমের সিদ্ধান্ত তোয়াক্কা না করে একটি পক্ষ প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েই উপজেলা কমিটি গঠন করে। এতে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। যে কারণে বিভিন্ন ইউনিটে সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তৃণমূলী নেতা কর্মীরা।
সাতক্ষীরা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মাসুম বিল্লাহ শাহীন বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সম্মতিক্রমে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জেলা বিএনপি’র সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করায় দলের নেতাকর্মীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসে । কিন্তু বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক কমিটি জেলা কমিটির সকল কমিটি গঠনের কার্যক্রমসহ বিভিন্ন কার্যক্রম স্থগিত করেছে।
এর আগে ২০১৯ সালে করা কমিটির ওপর নির্দেশনা ছিল তিন মাসের মধ্যে ইউনিট কমিটিগুলো গঠন করে পূর্ণাঙ্গ জেলা কমিটি প্রস্তুত করতে হবে। কিন্তু বিগত পাঁচ বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি।