শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার যুবক পারভেজ হাওলাদার (২২) দালালের প্রলোভনে সাড়া দিয়ে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন স্বপ্নের দেশ ইতালি। কিন্তু তার আশা পূর্ণ হয়নি।
লিবিয়া থেকে সীবোর্ডে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে অনেকের সাথে লিবিয়ার কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে পারভেজ। দীর্ঘ ৬ মাস লিবিয়ার অন্ধকার কারাগারে থেকে অমানুষিক নির্যাতন আর ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে অবশেষে ধুঁকে ধুঁকে মারা যায় পারভেজ। মৃত্যু হয় একটি স্বপ্নের।
এক মাসের বেশি সময় পার হলেও বাবা-মা ছেলের মৃত্যুর খবর জানতে পারে সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে যায় বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী। পারভেজ ভেদরগঞ্জ উপজেলার মহিসার ইউনিয়নের পুটিজুরি গ্রামের ইউনুস হাওলাদারের ছেলে।
আজ মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে পুটিজুরি গ্রামের ইউনুস হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। পারভেজের বাবা ইউনুস হাওলাদার ও মা পান্না বেগম ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে নাওয়া খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে শুধু বিলাপ করছেন। আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীরা এসে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। ছেলের শোকে বাবা মায়ের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে বাতাস। সকলের মাঝে নেমে আসে শোকের ছায়া।
ইউনুস হাওলাদার ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চামটা ইউনিয়নের সত্যপুর গ্রামের শামসুদ্দিন পেদার ছেলে রফিক পেদা লিবিয়া হয়ে অবৈধ সাগর পথে ইতালি লোক পাঠানোর দালালি করে। রফিক এলাকার যুবকদের ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখায়। রফিকের প্রলোভনে সাড়া দিয়ে পারভেজ সহ স্থানীয় কতিপয় যুবক অবৈধ পথে ইতালি যেতে রাজি হয়। ইটালি যেতে প্রত্যেককে ৮ লাখ করে টাকা দিতে হবে রফিককে।
ইউনুস হাওলাদার বলেন, নয় মাস হয় আমার ছেলে পারভেজকে ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়া নিয়ে যায় রফিক। লিবিয়া যাওয়ার সময় রফিককে ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। লিবিয়া যাওয়ার পর আরো দুই বার আমার কাছ থেকে টাকা নেয় রফিক। ৮ লাখ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও সে সর্বমোট আমার কাছ থেকে সাড়ে ১০ লাখ টাকা নিয়েছে। ৬ মাস আগে লিবিয়া থেকে নৌপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার কোস্টগার্ড আমার ছেলে পারভেজসহ অনেককে আটক করে। জেলখানায় না খেয়ে অত্যাচার নির্যাতনে এক মাস পূর্বে আমার ছেলে মারা যায়। কিন্তু এ খবর আমরা কেউ জানতে পারিনি। পারভেজের সাথে ধরা খাওয়া আমাদের এলাকারই এক ছেলে জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সোমবার রাতে পারভেজ এর মৃত্যুর খবর জানায়। কিন্তু যে রফিক দালাল আমার ছেলেকে ইটালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে এতগুলো টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সে রফিক দালাল আমাদেরকে ছেলের কোন খোঁজখবর দেয়নি। আমি রফিক দালালের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই, আমি আমার ছেলের লাশ চাই।
ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে মা পান্না বেগম পাগল প্রায়। সে ছেলের শোকে বিলাপ করছে আর বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। সে শুধু বলছেন, আমার বুকের ধন, সোনার মালনককে তোমরা এনে দাও। আমি আর কিছু চাই না, আমি আমার ছেলেকে চাই। আমি আমার ছেলের লাশ চাই। মে দালাল আমার এত বড় সর্বনাশ করেছে আমি তার বিচার চাই। আমার ছেলের মত আর কোন ছেলের যাতে আর সর্বনাশ করতে না পারে, আর কোন মায়ের বুক খালি করতে না পারে এজন্য আমি সরকারের কাছে সঠিক বিচার চাই।
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির আল নাফিস এ বিষয়ে বলেন, আমি এখনো বিষয়টি জানিনা। আমাকে কেউ জানায়নি। আমি চেয়ারম্যানের মাধ্যমে খোঁজ খবর নিতেছি। দালালের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।