মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধি:
সরকারি জায়গায় শত বছরের বেশি সময় ধরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বিশাল পাকুড় গাছ কেটে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে জামায়াতে ইসলামীর এক ইউনিয়ন নেতার বিরুদ্ধে। এই ঘটনা জানাজানি হতেই এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।মহম্মদপুরের বিনোদপুর মহাবিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে রাস্তার পাশে অবস্থিত গাছটি এলাকার মানুষকে ছায়া দিত, দিত অক্সিজেন, ছিল পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বিনোদপুর মহাবিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত শতবর্ষী এই পাকুড় গাছটি কাটার জন্য নির্দেশ দেন জামায়াতে ইসলামী বিনোদপুর ইউনিয়ন শাখার আমির মো. শাহরিয়ার সজীব। তাঁর নির্দেশে জামায়াত কর্মী মো. জিহাদ শেখ গাছটি কেটে ফেলার উদ্দেশ্যে এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কেটে ফেলেন।
বিষয়টি নজরে আসতেই এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে গাছ কাটা বন্ধ করতে বাধা দেন। স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে গাছ কাটা আপাতত স্থগিত হয়।
খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন ভূমি অফিসের নায়েব। তিনি কাটা পড়া গাছটি এবং অবশিষ্ট অংশ জব্দ করে তাঁর হেফাজতে নেন। এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।
গাছ কাটার নির্দেশদাতা জিহাদ শেখ সাংবাদিকদের জানান, “ইউনিয়ন জামাতের আমির সজীব সাহেব বন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে আমাকে গাছটি কাটার অনুমতি দিয়েছিলেন।”
অপরদিকে, ইউনিয়ন জামাতের আমির মো. শাহরিয়ার সজীবের দাবি সম্পূর্ণ ভিন্ন। তিনি বলেন, “জিহাদ শেখ আমাকে ফোনে জানায় তার ঘরের ওপর থাকা পাকুড় গাছের একটি ডাল কাটা দরকার। সে একটি ছবিও পাঠিয়েছিল। আমি তখন বন কর্মকর্তা এনামুলকে ফোন করে ডাল কাটার বিষয়টি জানাই। তিনি আমাকে অনুমতি দেন, এরপরই আমি জিহাদ শেখকে ডাল কাটার অনুমতি দিই। পুরো গাছটি কাটার অনুমতি আমি দেইনি।”
তবে, বন কর্মকর্তা এনামুল পুরো বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, “আমার কাছে শতবর্ষী পাকুড় গাছের ডাল কাটার অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। আমি অনুমতি না দিয়ে উল্টো ইউএনও মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলার জন্য বলি। গাছ কাটার কোনো অনুমতি আমি দিইনি।”
স্থানীয় বাসিন্দা মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, “আমার জন্মের পর থেকে এই গাছ দেখে আসছি। সকালে হঠাৎ দেখি গাছ কাটা হচ্ছে। আমরা কয়েকজন মিলে বাধা দিই এবং নিষেধ করি। নিষেধ অমান্য করেও গাছের এক-তৃতীয়াংশ কেটে ফেলা হয়। পরে সবার চেষ্টায় কাটা থামাতে সক্ষম হই।”
আরেকজন স্থানীয়, বাবলু শেখ বলেন, “যে গাছের ছায়ায় পথচারীরা বিশ্রাম নিত, সেই গাছটি আজ কাটতে দেখে খুব মর্মাহত হয়েছি। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয় কাজ।”
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও চাঞ্চল্য বিরাজ করছে। পরিবেশপ্রেমীরা সরকারি সম্পদ এবং প্রকৃতির এই গুরুত্বপূর্ণ অংশ রক্ষায় দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।





