১২ই নভেম্বর, ২০২৫

মধুমতি আজ “আইসিইউ”তে,,,

তুষার আহমেদ মহাম্মদপুর, মাগুরা প্রতিনিধি

বাংলাদেশের কয়েকটি বড় নদীর মধ্যে একটি মধুমতি। এখানে প্রজনন মৌসুমে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠা পানির মাছ ডিম দেয়। এক সময় এই নদী মাছে ভরপুর ছিল। এখন অবৈধ বালু উত্তোলন সহ মানব সৃষ্ট নানা কারণে ৮৭ প্রজাতির মাছের অভয়ারণ্য মধুমতি নদী আজ সংকটে। বলা চলে মধুমতি এখন “আইসিইউ”তে।

স্থানীয় সূত্র বলছে মহাম্মদপুর সীমানায় মধুমতির বালু উত্তোলন সবথেকে বেশি লক্ষ্য করা যায়। অবৈধ ও অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে এর জীববৈচিত্র্য এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। হাজার হাজার ঘরবাড়ি সরকারি স্থাপনা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল সবকিছু এখন নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। অবৈধভাবে নদীর গভীর থেকে বালু তোলার ফলে পাড়ের মাটি ভেঙে বিশাল জায়গা জুড়ে ধূসর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে মধুমতির চর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে চর পাচুরিয়া, হরে কৃষ্ণপুর, ঝামা, পয়েন্টে সব থেকে বেশি বালু তোলা হয়, যার কিছুটা সীমানা আলফাডাঙ্গা থানার মধ্যে। আলফাডাঙ্গা থানার একজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগের নেতা ভুয়া ইজারা নেওয়ার নামে বিগত সরকারের আমল থেকে এখন পর্যন্ত এখানে বালু তুলছে, সেই বালু বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্রি হয়, তাদের মধ্যে মহাম্মদপুরের হরে কৃষ্ণপুর ঘাটে বিক্রি হয় সব থেকে বেশি।

গত ৫ আগস্ট-এ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলেও মধুমতিতে থামেনি দুর্বৃত্তায়ন ও মানব সৃষ্ট দানব আচরণ। উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত অভিযানেও এদের দমানো যাচ্ছে না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ শাহিনুর আক্তার বলেন অবৈধ বালু উত্তোলনের খবর পেলেই আমরা অভিযান পরিচালনা করি, ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানা করি, অবৈধ বালু টানা তিন চাকার ট্রলি আটক করি। তারপরেও থামানো যাচ্ছে না এদের অবৈধ বালু উত্তোলন।

হরেকৃষ্ণ সীমানার অনেক ঘরবাড়ি এখন পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে আরো কিছু বাড়ি অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। ৮০ বছরের এক বৃদ্ধ কথা বলতে বলতে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন আমাদের ক্ষমতা নেই তাদেরকে আটকানোর, প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন এই অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করুন, তা না হলে আমাদের ঘরবাড়ি, জমি জমা সহ সকল অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলবো। নদী পাড়ের মানুষের হাহাকার দেখলে যে কোন মানুষের চোখের পানি ধরে রাখা কষ্টকর। স্থানীয় অনেক মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বালু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তারা নানান রকম দুর্ব্যবহার করে, এমনকি তাদেরকে মারতে পর্যন্ত যায়। ভয়ে তারা কথা বলে না। তরা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং সাহায্য কামনা করেছে।

মন্তব্য করুন